কলকাতা ব্যুরো: দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার দাপুটে যুব তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গীর খানের বিশেষ নিরাপত্তা তুলে নিল নবান্ন। সোমবার এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা সামনে আসতেই শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেও এলাকায় পরিচিতি রয়েছে এই জাহাঙ্গীর খানের। ২০১৮ সাল থেকে ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেতেন ফলতা ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি ও বজবজ বিধানসভার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক জাহাঙ্গির খান। ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তা মানে দু’জন কমান্ডো এবং আটজন ব্যক্তিগত দেহরক্ষী সবসময় থাকত তাঁর সঙ্গে। কিন্তু সেই নিরাপত্তা উঠে যাওয়ায় এখন চর্চায় যুব তৃণমূলের এই নেতা।

যদিও এ প্রসঙ্গে বিরোধীদের বাকবিতণ্ডা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন স্বয়ং জাহাঙ্গীর খান। তাঁর কথায়, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তা মাথা পেতে নেব। কে কী বলল তাতে কিছু এসে যায় না। ওসব নিয়ে আমি চিন্তিত নই। শুরু থেকেই যেমন দলের ভালর জন্য একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে এসেছি এখনও তাই করব।

তবে নিরাপত্তা তুলে নেওয়ায় অসুবিধার প্রশ্নে যুব নেতার উত্তর, আগেও তো দলের জন্য কাজ করেছি কোনও নিরাপত্তা ছাড়াই তারপর দল ভেবেছিল তাই নিরাপত্তা দিয়েছিল। এখন তা প্রত্যাহার করাতেও কোনও অসুবিধা নেই। এতে আমি ভীত নই। আগেও নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রিয় নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে দলের সৈনিক হিসেবে কাজ করেছি এখনও তাই করব।

ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, নবান্ন থেকে এই নির্দেশিকা জারি করার পর তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ লাইনে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তবে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী নাম জাহাঙ্গীর খান। অনেকেই বলেন, তিনি নাকি স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ কাছের। একুশের ভোটের পর থেকে ফলতা, বিড়লাপুর, বজবজ এলাকায় অসামাজিক কাজকর্ম বেড়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এমনকি যাঁরা এই কাজকর্ম করছে তাঁরা শাসকদলের ছত্রছায়ায় রয়েছে বলে পুলিশের উপরও চাপ রয়েছে বলে বার বার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।

জাহাঙ্গির খানের বিরুদ্ধে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও বিভিন্ন অভিযোগ জমা পড়েছে বলে সূত্রের খবর। সেই সব খতিয়ে দেখেই কি এই নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত? পুলিশ সূত্রে খবর, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সরকারি নিরাপত্তা পেয়েছিলেন জাহাঙ্গির। ২০১৪ সালে প্রথমবার যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ হন, তখন থেকেই উঠে আসে জাহাঙ্গীরের নাম। ধীরে ধীরে যথেষ্ট নাম পরিচিতি তৈরি করেন এলাকায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় ৩০ বছরের রাজনৈতিক সম্পর্ক শেষ করে ক্ষোভের কারণে গত বিধানসভা ভোটের আগে ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদার বিজেপিতে যোগ দেন। দলের যে সমস্ত নেতার বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ ছিল, সেই তালিকায় জাহাঙ্গীরের নাম ছিল বলে জানা গিয়েছে। যদিও এইসব অভিযোগের কথা তাঁর অজ্ঞাত বলেই জানিয়েছেন স্বয়ং জাহাঙ্গীর। তবে আসন্ন পুর নির্বাচনে এর কোনও প্রভাব পড়ে কি না, সেটাই এখন দেখার।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version