কলকাতা ব্যুরো: দাউদাউ করে জ্বলছে দক্ষিণ ইউরোপ। তুরস্ক থেকে গ্রিস, দাবানলে পুড়ছে দক্ষিণ ইউরোপের একাধিক দেশ। জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রিস। ঘরছাড়া কয়েক হাজার মানুষ। ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। তাঁদের মধ্যে একজন দমকলকর্মী। অন্যদিকে ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বহু মানুষ।

প্রসঙ্গত, ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রার জেরে গত সপ্তাহেই জঙ্গলে শুরু হয়েছিল দাবানল। আর এ বার তা সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করলো। এক রাতেই ঘরছাড়া হলেন কয়েক হাজার মানুষ কারণ সকলেরই বাড়ি চলে গিয়েছে আগুনের গ্রাসে। বিগত ১০ দিনেই গ্রিসের প্রায় ৫৬ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমি পুড়ে গিয়েছে, এমনটাই জানা গিয়েছে ইউরোপিয়ান ফরেস্ট ফায়ার ইনফরমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে। প্রতি বছরই দাবদাহ ও দাবানলের ঘটনা ঘটলেও এ বছরের বিভৎসতা গত বছরগুলির তুলনায় অনেকটাই বেশি। ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ অবধি প্রতিবছর গড়ে ১৭০০ হেক্টর জমি পুড়ে যায়, সেখানে এই বছর ১০ দিনেই ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি পুড়ে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে গ্রিসে মোট ১৫৪টি দাবানল শুরু হয়েছে। এগুলির মধ্যে ৬৪টি নেভানোর চেষ্টায় রয়েছে গ্রিস। বহু এলাকা থেকেই মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয়েছে হেলিকপ্টার, বিমানও। ইতিমধ্যেই তিনশো দমকল, ৩৫টি ফায়ার ট্রাক, দশটি বিমান আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছে। উদ্ধার কাজে নেমেছে সে দেশের সেনাও। এই পরিস্থিতির জেরে বর্তমানে গ্রিসের গড় তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ১৯৮৭ সালের পর থেকে সেখানে এত গরম কখনও পড়েনি।

তবে শনিবার টার্কিতে বৃষ্টি হওয়ায় সেখানে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু দমকা হাওয়ায় গ্রিসের বাকি অংশে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী মিতসোটাকিস বলেন, “এই বিভীষিকা শেষ হলে তারপরই ক্ষয়ক্ষতির আন্দাজ করা যাবে ও তা পূরণের কাজ শুরু করা যাবে।” ইতিমধ্যেই ফ্রান্স ও ব্রিটেনের তরফে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রঁ টুইট করে জানান, গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে এবং ফ্রান্সের তরফে ৮০ জন দমকলকর্মী ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হচ্ছে। একইসঙ্গে তিনটি ক্যানাডিয়ার অগ্নিনির্বাপক বিমানও পাঠানো হচ্ছে আকাশ থেকে জল ছিটিয়ে আগুন নেভানোর জন্য। অন্যদিকে, ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র সচিব প্রীতি পটেলও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মিশরের তরফ থেকেও পাঠানো হচ্ছে দুটি হেলিকপ্টার ও একটি ক্যানাডিয়ান বিমান।

উল্লেখ্য, ইতালির সিসিলিতে প্রথম দাবানল শুরু হয়। আর এখন সেই দাবানল ইতালির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। শত চেষ্টা করে আগুন আয়ত্ত্বে আনা যাচ্ছে না। দাবানলে পুড়ে যাচ্ছে বনজঙ্গল। ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি। হাজার-হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে তুরস্কের ৩০টি অঞ্চলে ১৩৭টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১১টি বড় আগুন এখনও জ্বলছে। তবে পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version