কলকাতা ব্যুরো: পুরভোটে ভরাডুবির পরই নয়া রাজ্য কমিটি ঘোষণা করলো বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। ব্যাপক রদবদল হলো গেরুয়া শিবিরের রাজ্য কমিটিতে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তরুণ মুখেদেরও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রাধান্য পেয়েছেন বিধায়ক-সাংসদরাও।
যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরানো হয়েছে সৌমিত্র খাঁকে। বদলে সেই পদের দায়িত্ব পেলেন ইন্দ্রনীল খাঁ। এদিকে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি পদের দায়িত্ব সামলাবেন সৌমিত্র খাঁ। সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাদ পড়েছেন সায়ন্তন বসু, সঞ্জয় সিংও। তবে দলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক থাকছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। নতুন রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন অগ্নিমিত্রা পলও। তিনি থাকছেন রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদে। এতদিন দলের মহিলা মোর্চার সভাপতি ছিলেন অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁর জায়গায় এবার দলের রাজ্য মহিলা মোর্চার নতুন সভাপতি হচ্ছেন তনুজা চক্রবর্তী।
এর পাশাপাশি জ্যোতির্ময় মাহাতোকেও রেখে দেওয়া হয়েছে নতুন কমিটিতে। যাঁরা নতুন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সায়ন্তন বসু, সঞ্জয় সিং এবং রথীন বসু। এই তিনজনকেই নতুন কমিটিতে বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে হয়েছে। তফসিলি মোর্চার সভাপতি বিধায়ক জোয়েল মুর্মু।
বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটিতে সহ সভাপতি থাকছেন ১১ জন। সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছে পাঁচ জনের নাম। বিজেপির সাংগঠনিক পরিকাঠামো অনুযায়ী, সভাপতি পদের পরেই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর পদ এবং অন্যান্য সাধারণ সম্পাদকেরা। সেদিক থেকে দেখতে গেলে দলের নতুন রাজ্য কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকছেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, অগ্নিমিত্রা পাল, দীপক বর্মণ এবং জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়।
দলের রাজ্য কমিটির মুখ্য মুখপাত্র থাকছেন শমীক ভট্টাচার্য। এর পাশাপাশি জয়প্রকাশ মজুমদারকেও রাজ্য কমিটির মুখপাত্র করা হয়েছে। তপন শিকদারের সময় থেকে বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে নতুন তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মিডিয়ার ইনচার্জ করা হয়েছে প্রাক্তন যুব সভাপতি তুষার কান্তি ঘোষকে। এতদিন ইনচার্জ ছিলেন সপ্তর্ষি চৌধুরী। তাঁকে এবার কো- ইনচার্জ করে তাঁর মাথার উপর বসানো হয়েছে তুষার কান্তি ঘোষকে। এর পাশাপাশি প্যানেলে এবং দলীয় মুখপাত্র অনেক নতুন মুখকে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
পুরভোটে বিপর্যয়ের জেরে চরমে পৌঁছয় দলের অন্দরের গোষ্ঠী কোন্দল। প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ ও দুর্নীতির অভিযোগ এবং সর্বোপরি সাংগঠনিক স্তরে অচলাবস্থা। এহেন টালমাটাল পরিস্থিতিতেই ঘোষণা করা হলো বিজেপির নয়া রাজ্য কমিটি। দলের রাজ্য কমিটি চূড়ান্ত করতে বুধবারই দিল্লিতে তলব করা হয় দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। বুধবার সকাল সকাল দিল্লি উড়ে যান বালুরঘাটের সাংসদ। শীর্ষ নেতৃত্বের ডাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও।
সেপ্টেম্বর মাসে একপ্রকার হঠাৎই দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতি পদে নিয়োগ করে বিজেপি। সুকান্তকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও দিলীপের আমলের রাজ্য কমিটিতে কোনও বদল করা হয়নি অর্থাৎ যে রাজ্য কমিটির নেতৃত্বের বিধানসভা নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হয়েছে, তারাই এখনও ক্ষমতায়। আর শুধু বিধানসভা কেন, তারপর যে উপনির্বাচন হল বা পুরসভা নির্বাচন হল সব ভোটেই ভরাডুবি হচ্ছে বিজেপির। তাই রাজ্য কমিটিতে কিছু কিছু বদল করলো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।