কলকাতা ব্যুরো: ফের উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে বাংলার পর্যটক দল। এবার উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার কাপকোটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেল খনি আসানসোলের পর্যটকদের একটি গাড়ি। যার মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বেশ কয়েকজনের আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে খবর।

সূত্রের খবর, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিতে আসানসোলের রানিগঞ্জের ১২ জন পর্যটক ছিলেন। তাঁদের মধ্যেই ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুজন মহিলাও আছেন বলে খবর। উত্তরাখণ্ডে বাগেশ্বরের জেলাশাসক বিনীত কুমার এবং পুলিশ সুপার অমিত শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, মৃতরা হলেন, কিশোর ঘটক (৫৯), শ্রাবনী চক্রবর্তী (৫৬), সুব্রত ভট্টাচার্য (৬১), রুনা ভট্টাচার্য (৫৬), চন্দনা খাঁ (৬৪)। সুব্রত ভট্টাচার্য ও রুনা ভট্টাচার্য স্বামী-স্ত্রী। তাঁরা দুর্গাপুরের বাসিন্দা। কিশোর ঘটক ও চন্দনা খাঁ রানীগঞ্জের বাসিন্দা। শ্রাবনী চক্রবর্তী আসানসোলের বাসিন্দা।

অন্যদিকে ঘটনায় রানীগঞ্জের সিয়ারসোল-এর ৪ সদস্য, খনি কর্মী তথা সিটু নেতা কিশোর ঘটক, তার বোন দীপান্বিতা ঘটক, সিয়ারসোল এর কাঞ্জিলাল পাড়ার বাসিন্দা জগন্ময় কাঞ্জিলাল, তাঁর স্ত্রী মধুছন্দা কাঞ্জিলাল, রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজ এর লাইব্রেরিয়ান চন্দনা ভট্টাচার্য খান, তাঁর স্বামী টিপু খান, আসানসোলের রুনা ভট্টাচার্য ও তাঁর স্বামী গুরুত্বর ভাবে আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২১ অক্টোবর একটি ট্যুর সংস্থার সঙ্গে আসানসোলের রানিগঞ্জ সহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে মোট ৩০ জন পর্যটক উত্তরাখণ্ড বেড়াতে গিয়েছিলেন। আগামী ৩০ নভেম্বর তাঁদের ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু, তার আগেই দুর্ঘটনার খবর এল। ওই পর্যটক দলের মধ্যে আসানসোল জেলা হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার কঙ্কন রায়ও রয়েছেন। তিনি দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়িটিতে ছিলেন না।

তাঁর দলের সদস্যদের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কঙ্কন রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তিনটি ট্রাভেরা গাড়িতে করে তাঁরা বুধবার সকালে কৌশানির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন। তিনি প্রথম গাড়িটিতে ছিলেন। মাঝের গাড়িটিই বাগেশ্বর জেলায় কাপকোট এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে তাঁদের গাড়িটিতে ধাক্কা মারে। তারপর গাড়িটি সোজা খাদে গিয়ে পড়ে। ওই গাড়ির ধাক্কায় কঙ্কন রায়দের গাড়িটিও বেসামাল হয়ে পড়েছিল। তবে চালক দক্ষ হওয়ায় বিপদ সামলে নিয়েছেন। তারপর কঙ্কন রায় সহ তাঁর গাড়ির সদস্যরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধারকাজে হাত লাগান।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই গাড়ির ১২ জন সদস্যকেই গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই হাসপাতালেই ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। কঙ্কনবাবু জানান, পুলিশ সকলকে উদ্ধার করে যে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে, সেটি ঘটনাস্থল থেকে অনেকটা দূরে। তাঁরা এখনও পর্যন্ত ঘটনাস্থলেই রয়েছেন। তাই ৫ জনের মৃত্যুর খবর পেলেও কাদের মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন। পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনও এবিষয়টি নিশ্চিত করে এখনও কিছু জানাতে পারেনি। তবে ওই পর্যটকদের পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেছে। এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কঙ্কন রায় সহ আসানসোলের ওই ৩০ জন পর্যটকের পরিবার।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version