কলকাতা ব্যুরো: খাস কলকাতায় ‘ওমিক্রনে’র থাবা। দুজন বিদেশ ফেরত করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর। দিন কয়েক আগে একজন নাইজেরিয়া থেকে এবং অন্যজন লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতায় ফিরেছিলেন। রাজ্যে ফেরার পর দুজনই কোভিড পজিটিভ হওয়ায় তাঁদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে পাঠানো হয়। সেই রিপোর্টই আসে বুধবার রাতে। জানা গিয়েছে, দুজনই আপাতত কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল চার। 

উল্লেখ্য, রাজ্যে প্রথম ওমিক্রনে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল ১৫ ডিসেম্বর। মুর্শিদাবাদের সাত বছর বয়সি এক বালক ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছিল। সে তাঁর পরিবারের সঙ্গে আবুধাবি থেকে হায়দরাবাদ হয়ে রাজ্যে ফিরেছিল। এরপর ২০ ডিসেম্বর খোঁজ মেলে আরও এক আক্রান্তের। যদিও দিল্লিতেই ওই ব্যক্তির শরীরে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। ১০ ডিসেম্বর তিনি দিল্লির এক হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে রিপোর্ট নেগেটেভ হওয়ার পর সুস্থ হয়ে রাজ্যে ফিরেছিলেন। এরপর আজ আরও দুইজনের শরীরে ওমিক্রনের সন্ধান পাওয়া গেল।

রবিবার লন্ডন থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৬৪ বিমানে কলকাতায় আসে আলিপুরের ওমিক্রনে আক্রান্ত যুবক। বিমানবন্দরে ওই যুবকের আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপরই তাকে অন্যান্য যাত্রীদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়। পরে তাকে ঢাকুরিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা ১৯ বছর বয়সি ওই যুবকের জিনোম সিকোয়েন্সিয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন। বুধবার সেই রিপোর্টে ওমিক্রন ধরা পড়েছে।

 এদিকে ১২ ডিসেম্বর নাইজেরিয়া থেকে কলকাতায় এসেছিলেন ৬৯ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধ। নাইজেরিয়া থেকে ফেরার পর থেকেই করোনার মৃদু উপসর্গ অনুভব করতে শুরু করেন তিনি। দেরি না করে করোনা পরীক্ষা করান তিনি। ১৪ ডিসেম্বর তাঁর সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, গত ১৫ দিনে বিদেশ ফেরত ৮ জনের নমুনা কল্যাণীর জিনোম সিকোয়েন্সিং সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনটি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। দুজনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। বাকিদের রিপোর্টের অপেক্ষায় গোটা রাজ্য। আপাতত উৎসবের মরশুমেই ‘ওমিক্রন’ আতঙ্কে ত্রস্ত রাজ্যবাসী। 

এদিকে নদিয়ার কল্যাণীর জহর নবোদয় আবাসিক স্কুলে হানা দিয়েছে করোনা। প্রথমে দুজন ছাত্রছাত্রীর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তারপরই বাকি ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা করানো হয়। রিপোর্ট আসার পর দেখা যায়, আরও ২৯ জন করোনা আক্রান্ত। স্বাভাবিকভাবে একসঙ্গে এতজনের রিপোর্ট পজিটিভ আসায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বুধবার সকলের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। বৃহস্পতিবার তাদের রিপোর্ট আসার কথা। স্বভাবতই এমন পরিস্থিতিতে স্কুল খোলা রাখা হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে স্কুলের প্রিন্সিপাল মৌসুমী নাগ জানিয়েছেন, স্কুল বন্ধের ব্যাপারে আমরা কিছু বলব না। বুধবারও ক্লাস হয়েছে। আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। যদিও আক্রান্তরা সবাই প্রায় উপসর্গহীন। স্কুল বন্ধের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

গত ১৬ নভেম্বর কল্যাণীর জহর নবোদয় আবাসিক স্কুল খোলে। জানা গিয়েছে, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে দুই পড়ুয়ার হালকা জ্বর সঙ্গে সর্দিকাশি হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের করোনা পরীক্ষা করানো হয়। দুজনরই রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপরে স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, সমস্ত ছাত্রছাত্রী ও স্কুলের সকলের করোনা পরীক্ষা হবে। সেই মতো গত সোমবার স্কুলের ২১৫ জন ছাত্রছাত্রীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাদের মধ্যে ২৯ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাঁদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version