কলকাতা ব্যুরো: খড়দহে তৃণমূল কাউন্সিলরকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি করেই দৌড়ে পালিয়েছিল শম্ভু ওরফে অমিত পণ্ডিত। সঙ্গেসঙ্গে পাল্টে ফেলেছিল পোশাকও। কিন্তু শত চেষ্টা করেও লাভের লাভ হলো না। সামান্য ভুলেই খুনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধরা পড়ে গেলো অভিযুক্ত। ইতিমধ্যেই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই রাজ্যের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন তিনি। তবে কী কারণে পরপর একরম ঘটনা ঘটল, তা জানতে চাইলেন স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে। মূলত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। আর সেই বৈঠকের পরই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে সিআইডি-র একটি টিম। তবে, রাজ্যের তরফে এখনও এই খুনের ঘটনায় সিআইডি তদন্তের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের এডিজি সিআইডি, এডিজি আইন শৃঙ্খলা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব। দুই কাউন্সিলর খুনের ঘটনা নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। রাজ্যের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে এ দিন। সূত্রের খবর, রবিবারের দুটি খুনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো ক্ষুব্ধ।

সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী বলা যায়, পায়ে হেঁটে এসে কাউন্সিলর অনুপম দত্তকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রে়ঞ্জ থেকে গুলি করে এক ব্যক্তি। তার পরণে ছিল নীল রঙের পোশাক। আর গুলি করা মাত্রই বাইক থেকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন অনুপমবাবু। চমকে ওঠেন তার বাইকের চালক। কেউ কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়ে পালায় অভিযুক্ত। প্রমাণ লোপাট করার জন্য প্রথমেই পালটে ফেলে নিজের পোশাক। এরপর গা ঢাকা দেয় হোগলা বনে। ততক্ষণে এলাকায় হইচই পড়ে গিয়েছে।

সিসিটিভি ফুটেজ

তবে কোন পথে পালিয়েছে অভিযুক্ত, তা বোঝার চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। সেই সময়ই তাঁরা দেখতে পান হোগলা বনে কিছু একটা নড়াচড়া করছে। সন্দেহ দানা বাঁধে তাঁদের মনে। এরপরই হোগলা বন সংলগ্ন এলাকা ঘিরে ফেলে স্থানীয়রা। কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও বেড়িয়ে আসেনি অভিযুক্ত। এরপরই জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেয় স্থানীয়রা। স্বভাবিকভাবেই ভয় পেয়ে বেরিয়ে আসে শম্ভু। সেই সময় তার কাছেই ছিল খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। জঙ্গলের পাশেই ছিল খুনের সময় পরণে থাকা পোশাকও। যা স্থানীয়দের অনুমানকে আরও পোক্ত করে।

এরপরই অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সোমবারই ধৃতকে তোলা হবে আদালতে। এদিকে ঘটনার তদন্তের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে বিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক ও স্থানীয়রা। যার জেরে ব্যহত হয় যান চলাচল।

উল্লেখ্য, রবিবার রাত পৌনে আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্টি অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন পানিহাটির নবনির্বাচিত তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্ত। সেই সময় আগরপাড়া এলাকায় বাইকে করে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। তাঁর মাথা ও ঘাড়ে গুলি লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন অনুপম। স্থানীয়রা তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version