কলকাতা ব্যুরো: মাত্র এক বছরের মধ্যে পরপর তিন ভাইয়ের মৃত্যু হল। যাদের বড় ভাই দিলীপ কুমার। যাকে একসময় বলিউডের বাদশা মানতো আমজনতা। গতবছর আগস্ট মাসে লীলাবতী হাসপাতাল মৃত্যু হয় দিলীপ কুমারের ছোট ভাই আসলাম খানের। আর সেপ্টেম্বরে মারা জন সবচেয়ে ছোট এহেসান খান। আর বুধবার মারা গেলেন তাদের দাদা ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমার।
বলিউড সিনেমার জগতে যেন গ্রহণ লেগেছে, তাই হয়তো গ্রাস করে চলেছে বলিউডের নক্ষত্র জগতকে। জীবন যুদ্ধে অবশেষে পরাজিত হলেন আমাদের সকলের প্রিয় দিলীপ কুমার। ৯৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। আবার বলিউড জগতে নেমে এল শোকের ছায়া।


৩০ জুন শ্বাসকষ্টের কারণে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, দীর্ঘকালীন অসুস্থতার পর বুধবার সকালে মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এবং শাহরুখ খান, রণবীর কাপুর, করণ জোহর এবং বিদ্যা বালান সহ বলিউডের বেশ কয়েকটি অভিনেতা ও অভিনেত্রী তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর সাথে দেখা করতে অভিনেতার বান্দ্রার বাসায় গিয়েছিলেন। কবরস্থানে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দিলীপ কুমারের সমাধিস্থলে অমিতাভ বচ্চন ও পুত্র অভিষেক বচ্চন উপস্থিত ছিলেন।
বলিউড জগতে দিলীপ কুমার নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম ছিল মহম্মদ ইউসুফ খান। ১৯৫০ এর দশকে তিনি ছিলেন সবথেকে জনপ্রিয় এবং দামি অভিনেতা, যিনি তাঁর প্রত্যেক মুভির জন্য এক লাখ টাকা চার্জ নিতেন। বর্তমানে খান বলতে আমরা সালমান খান, শাহরুখ খান, আমির খানকে চিনি, কিন্তু বাস্তব রূপে দিলীপ কুমার ছিলেন প্রথম বলিউডের কিং খান। সেরা অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরষ্কারের জন্য সর্বাধিক জয়ের রেকর্ডটি তার রয়েছে এবং তিনি এই পুরস্কারের উদ্বোধনকারীও ছিলেন।


১৯৪৪ সালে মুম্বাই টকিজ প্রযোজিত জোয়ার-ভাটা ছবিতে অভিনেতা হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি। কিন্তু এই মুভি তাকে সফলতা দিতে পারেনি। কিন্তু ১৯৪৭ সালে যুগনু মুভি তাকে এনে দিয়েছিল সিনেমা জগতের প্রাথমিক সাফল্য, যেখানে তাকে নুরজাহানের সাথে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। তারপর ১৯৫০ দশকে জোগান, বাবুল (১৯৫০),হালচাল (১৯৫১),তারানা(১৯৫১) দাগ (১৯৫২), সাং -দিল (১৯৫২), শিকাস্ট (১৯৫৩), অমর (১৯৫৪), উড়ান খোতলা (১৯৫৫) ইত্যাদি চলচ্চিত্র অভিনয় করেছে। তিনি প্রথম অভিনেতা যিনি দাগ সিনেমার জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। একবার নয় সাতবার এই সম্মানে তাকে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি এর দশকে মোট ক্যারিয়ারে ৬৫ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

দিলীপ কুমার যেমন রোমান্টিক ছবিতে ভূমিকা জন্য পরিচিত হয় আন্দাজ (1949), বেপরোয়া বা হঠকারী এবং চালবাজ Aan (1952), সামাজিক নাটক Daag থেকে (1952), নাটকীয় দেবদাস (1955), হাস্যরসাত্মক Azaad (1955), মহাকাব্য ঐতিহাসিক Mughal- ই-আজম (1960), সামাজিক ডাকাত অপরাধের নাটক গুঙ্গা যমুনা (1961), এবং কৌতুক রাম অর শ্যাম (1967)। তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ধরনের অভিনয়ের দ্বারা দর্শককে মুগ্ধ করেছেন। সেই সময় অর্থাৎ পাঁচ এর দশকে জনপ্রিয়তার বিচারে শীর্ষে থাকা ত্রিশটি সিনেমার মধ্যে নটি চলচ্চিত্র তার স্থান পেয়েছিল। তার অভিনীত মহাকাব্য মুগলেআজম চলচ্চিত্রটি ছিল তখনকার দিনে সবথেকে বিগ বাজেটের মুভি। মুগল -ই-আজম ২০১০ এর দশকের গোড়ার দিকে সর্বাধিক উপার্জনকারী ভারতীয় চলচ্চিত্র ছিল, যা ২০১১ সালে ১০০০ কোটি ডলারের সমতুল্য ছিল। 1976 থেকে ছায়াছবি থেকে পাঁচ বছর বিচ্ছেদের নেন। তারপর ১৯৮২ সালে শক্তি যা বক্স অফিসে হিট আয়কারী ছবি ছিল এবং তাকে সমালোচকদের প্রশংসা এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য তার অষ্টম এবং চূড়ান্ত ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। ১৯৯১ সালে, রাজ কুমারের সাথে সওদাগরে অভিনয় করেছিলেন , এটি পরিচালক শুভাশ ঘাইয়ের সাথে তাঁর তৃতীয় এবং শেষ ছবি। 1959 সালের পাইঘামের পরে রাজ কুমারের সাথে এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। সওদাগর তার শেষ সিনেমা, যা বক্স অফিসে সাফল্য এনে দিয়েছিল। ১৯৯৪ সালে তিনি শিল্পে তাঁর অবদানের জন্য ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছিলেন।

অর্থাৎ তিনি হলেন বলিউড জগতের ইতিহাস এক জন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি বলিউডের সিনেমা জগতের একটা অংশ যার হাত ধরে সিনেমা জগতের সৃষ্টি হয়েছিল। যার অবদান অতুলনীয়। তাই তার এই মৃত্যুতে গোটা বলিউড জগতে শোকাহত। বলিউডের লতা মঙ্গেসকার থেকে শুরু করে কৃতি সানন, ধর্মেন্দ্র, বৈজন্তীতিমালা মালা তিমালাবলিউডের প্রত্যেক অভিনেতা অভিনেত্রী তার মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং তার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version