কলকাতা ব্যুরো: হাইকোর্টের বাজি বন্ধের নির্দেশ মেনে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সংশয় জিয়ে রইলো রাজ্যে। দীপাবলি, ছট পুজো কিংবা গুরু নানকের জন্মদিন; উৎসব পালন করতে হবে বাজি না পুড়িয়েই শুক্রবার এমনই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অনিরূদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। গতকালই আদালতের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছিল এমন নির্দেশ। আর শনিবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই মান্যতা দিলো রাজ্য। শনিবার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের কোনও বাজি না জ্বালানোর যে নির্দেশ শুক্রবার দেওয়া হয়েছিল তা বহাল থাকবে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন পর্ষদ সচিব রোশনি সেন।

তবে সমস্যা এখানে নয়। সমস্যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাজির উপর সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হচ্ছে না। শুধুমাত্র বেরিয়াম সমৃদ্ধ বাজি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। শুক্রবার এমনটাই নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেইসঙ্গে শীর্ষ আদালত এও জানিয়েছে, কারও স্বাস্থ্যের বিনিময়ে কোনও উৎসব করা যায় না।

শুক্রবার বিচারপতি এম আর শাহ এবং বিচারপতি এ এস বোপান্নার ডিভিশন বেঞ্চ জানিযেছে, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারার আওতায় কারও সুস্বাস্থ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যায় না। প্রবীণ নাগরিক, শিশু-সহ অপরজনের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না কাউকে। তবে শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘এটা পরিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে যে বাজি ব্যবহারের উপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধুমাত্র সেইসব বাজি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে (বেরিয়াম সমৃদ্ধ বাজি), যা নাগরিকদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। আরও স্পষ্টভাবে প্রবীণ নাগরিক এবং শিশুদের (ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক)।’

সেইসঙ্গে সকল রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, বাজির উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তাতে যদি কোনও গাফিলতি থাকে, তাহলে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। বাজি তৈরি, ব্যবহার এবং বিক্রি শীর্ষ আদালতের রায়ের বিষয়ে মানুষ যাতে সচেতন হন, সেজন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আর এরপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বাজি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মনে। আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি। কিন্তু বাজি নিয়ে সংশয় যেন কিছুতেই কাটছে না। আর তারমধ্যেই বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর কলকাতা হাইকোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জির কথাও ভাবতে শুরু করেছেন।

প্রসঙ্গত, শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে এবার কালীপুজোতে সব ধরনের বাজির পোড়ানো নিষিদ্ধ থাকবে। সেইসঙ্গে কালীপুজো। ছটপুজো, জগদ্বাত্রী পুজো-সহ চলতি বছরের সব উৎসবে বাজি পোড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছিল, পরিবেশবান্ধব বাজি চিহ্নিত করার উপায় নেই পুলিশের। সেই পরিস্থিতিতে কোনও রকমের বাজি পোড়ানো যাবে না।

এবার দুর্গাপুজোয় রাজ্যের আবেদন মেনে মণ্ডপে ঢোকার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কিছুটা ছাড় দিলেও সেই সুযোগের অপব্যবহার হয়েছে। তাই আগের থেকে শিক্ষা নিয়ে বাজির ক্ষেত্রে সেই ফাঁক আর আদালত রাখতে চাইছে না। হাইকোর্টের বক্তব্য, গ্রিন বা সবুজ বাজিতে ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে আগাগোড়া অসঙ্গতি রয়েছে। বাস্তবে সবুজ বাজিই জ্বালানো হচ্ছে কি না, এ ব্যাপারে নজরদারির ব্যবস্থাই নেই। পুলিশ এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞও নয়। ফলে ছাড় দিলে সবুজ বাজির মোড়কে নিষিদ্ধ বাজি ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। যে সুযোগ কোনও মতেই দেওয়া চলে না।

গত বছরও জারি ছিল এই নিষেধাজ্ঞা। অতএব প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বেলেই কালীপুজো, ছটপুজো-সহ যাবতীয় উৎসব পালন করতে হবে বলে জানিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অনিরূদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। আর কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের রেশ টেনেই শনিবার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও একই নির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানেও জানানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়েই চলতি বছর বন্ধ থাকবে সবরকম বাজির ব্যবহার।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version