মৈনাক শর্মা

আমেরিকার ইতিহাসে সব চেয়ে বড় ও দীর্ঘদিনের যুদ্ধের সমাপ্তির লক্ষে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখের মধ্যে সমস্ত মার্কিন সেনবাহিনী আফগানিস্তান থেকে সরানোর ঘোষণা করলেন বাইডেন। ট্রাম্প ও তালিবান চুক্তি অনুযায়ী সরানো হচ্ছে সেনা, জানায় ওয়াশিংটন। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রায় ২৪০০ জন মার্কিন সেনা প্রাণ হারায় ও ২ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ওয়াশিংটনকে।

আমেরিকার আফগানিস্তান অভিযানের ইতিহাস —
সাল ২০০১, আমেরিকাতে হামলা চালায় লাদেন। হামলায় দায় ভার নেয় তালিবান গোষ্টী। তার পরই তালিবান উৎখাতের লক্ষে মার্কিন সেনা রওনা হয় কাবুল অভিযানে। নভেম্বরের ১৩ তারিখ মার্কিন সেনা কাবুল পৌঁছালে, তালিবান গোষ্টী কান্দাহারে পালিয়ে যায়।

দিন ডিসেম্বর ৫, ২০০১। জার্মানির বন শহরে হয় সমঝোতা। যার ফলে ক্ষমতা লাভ করেন আমেরিকার নেতৃত্বাধীন উত্তর মহাজোট। এই সমঝোতার মাধ্যমে মোল্লাহ ওমর কান্দাহার ছেড়ে দিলে তালিবানি সরকার নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

২০০১ সালের ২২ ডিসেম্বর, বন চুক্তিকে কেন্দ্র করে ২৯ জনের গনতান্ত্রিক পরিচালনা পরিষদ গঠন করে মার্কিন মহাজোট, যার চেয়ারম্যান করা হয় হামিদ কারজাইকে।

২০০৪ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে আফগানিস্তনে গনতন্ত্র ফেরানোর লক্ষে হয় নির্বাচন। কারজাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে অসচ্ছতার অভিযোগ করে দুই দল নেতা আশরাফ ঘানি ও আব্দুল্লাহ। পরে মার্কিন হস্তক্ষেপে ঘানিকে রাষ্ট্রপতি ও আবদুলহকে সচীব করা হয়। অর্থাৎ আপাতত গঠন করা হয় সরকার।

সেই বছরই মার্কিন সেনার হাত ছাড়ে ন্যাটোর মিলিত সৈন্য। তাদের অভিযান শেষ করার সাথেই আবার শুরু হয় তালিবানি বিদ্রোহ। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তালিবান গোষ্টী হামলা চালায় মার্কিন সেনার উপর। মার্কিন সেনার ব্যার্থতার ফলে ২০১৮ সালের শেষের দিকে প্রায় অর্ধেক আফগানিস্তান দখল করে তালিবান গোষ্টী।

বিরোধের নিষ্পত্তির জন্যেই ২০২০ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় সাক্ষর হয় তালিবান ও আমেরিকার শান্তি চুক্তি। যার ভিত্তিতেই সেনা সরানোর ঘোষণা ওয়াশিংটনের। আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের পরই প্রশ্ন উঠে আফগানিস্তানের ভবিষ্যত্ নিয়ে। প্রশ্নের মুখে ভারত ও আফগান সম্পর্ক, তালিবান গোষ্টীকে বরাবর বিরোধ করেছে দিল্লির বিদেশ নীতিl সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কাবুলে আবার তালিবানি সরকার গঠন হলে বাড়বে ভারতের দুশ্চিন্তা।

তবে সম্পূর্ন সৈন্য ফেরানোর লক্ষ্য নেই আমেরিকার। কিছু সেনা কূটনৈতিক শান্তি রক্ষার স্বার্থে তৎপর থাকবে কাবুলে, জানায় বাইডেন প্রশাসন। আপাতত সেনা ফেরালেও ভবিষ্যতেও যে মার্কিন হস্তক্ষেপ কতটা থাকবে তা নির্ভর করছে তালিবানি পদক্ষেপের উপর।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version