সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপ। বাসিন্দা মাত্র ১৬ জন। তাদের নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থাও রয়েছে। এক দৌড়ে দ্বীপের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যাওয়া যায় কিন্তু অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে এখানে বেঁচে থাকতে হয়। জার্মানির এই দ্বীপের নাম ওল্যান্ড আইল্যান্ড। এই দ্বীপকে বলা হয় জার্মানির উত্তর সাগরে অবস্থিত তথাকথিত ‘হলিং আইল্যান্ড’। এই সাগরে প্রাচীর বিহীন ছোট ছোট দ্বীপকে হলিং আইল্যান্ড বলা হয়। এই সব দ্বীপ সামান্য ঝড় বা বড় ঢেউয়ের কারণেই প্লাবিত হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও দ্বীপ ছাড়তে চান না বাসিন্দারা। সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপ সেখানে বাসিন্দা মাত্র ১৬ জন। তাদের নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থাও রয়েছে
নির্জন দ্বীপে থাকতে ভয় না করলেও বন্যার সময় জল যখন দ্বীপের অনেক উপরে উঠে আসে সেই সময়টা দ্বীপে বাস করা সামান্য সংখ্যক মানুষের জন্য খুব ঝুঁকির। বিশ শতকের শুরুতে ওল্যান্ড দ্বীপের অস্তিত্বের লড়াই শুরু হয়। ওই সময় ব্লক বসিয়ে দ্বীপের চারপাশে বাঁধ দেওয়া হয়। এই কারণেই এই দ্বীপের বাসিন্দারা এখনো টিকে আছেন। দ্বীপের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র বাহন রেল ওয়াগন- বেটিনা ফ্রিয়ার্স। বাসিন্দারা ওল্যান্ড দ্বীপে আসার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, তারা মেট্রো স্টেশনে এসে দোটানায় পড়ে যান। তারা থাকবেন কি চলে যাবেন তা নিয়ে দ্বিধায় পরে যান। তবে ওল্যান্ড দ্বীপে যাওয়ার বাহন আর ভ্রমণের পথ তাদের কাছে চমকপ্রদ ছিল। তারা মালপত্র নিয়ে চেপে বসলেন। মনে হল যেন জলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। অতপর এই ছোট্ট দ্বীপটিতে পৌঁছে যান তারা। তখন তাদের মাথার উপর কোনো ছাদ ছিল না। ওখান থেকে দূরে ছোট ছোট দ্বীপ দেখা যায়। মনে হয়, যেন অন্য এক পৃথিবীতে এসে পড়েছেন। শহর থেকে এখানে আসার পর মনে হল সমস্ত শোরগোল থেমে গিয়েছে। পাখির সুমধুর কণ্ঠে গান, গাছের পাতার মর্মর ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সমুদ্র দেখার পর নিজেদের মধ্যে স্বস্তি আসে।
এই দ্বীপের বাসিন্দাদের প্রায় সবাই বেশ বয়স্ক। তাদের কোনো সন্তান এখানে নেই, নতুন করে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। আর নতুন করে কেউ আর এখানে আসছেও না। আগে এখানকার বাসিন্দা ছিল ৫২ জন। এখন সাকল্যে ১৬ জন। জার্মানির সবচেয়ে ছোট ও একমাত্র খড়ের চালাবিশিষ্ট বাতিঘরটিও ওল্যান্ড দ্বীপে আবস্থিত। বাতিঘরটির উচ্চতা মাত্র ৭ দশমিক ৪ মিটার। বাতিঘরটি নির্মাণ করা হয় ১৯২৯ সালে। পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যার রহস্য হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও সমাধান হয়নি। এমনই একটি দ্বীপ রয়েছে যাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে প্রশান্ত মহাসাগর। চারদিকে জল আর মাঝে ছোট্ট সবুজ। এভাবেই প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন দ্বীপ পিটকেয়ার্ন। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে আগ্নেয় শিলা দিয়ে তৈরি চারটি দ্বীপ রয়েছে। এই দ্বীপগুলি হল পিটকেয়ার্ন, হেন্ডারসন, ডুসি এবং ওয়েনো। যার মধ্যে একমাত্র পিটকেয়ার্নেই মানুষ বাস করে। বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ পিটকেয়ার্ন নিয়ে জনমানসে কৌতূহলের অন্ত নেই। পিটকেয়ার্ন দ্বীপের মধ্যে একটি গ্রাম হল অ্যাডামসটাউন। এটি পিটকেয়ার্নের রাজধানী। অ্যাডামসটাউনে স্থায়ী ভাবে ৪৭ জন মানুষের বাস। জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজধানী এটি।
দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অ্যাডামসটাউনের দূরত্ব সাড়ে পাঁচ হাজার কিমি। অ্যাডামসটাউনের কাছে রয়েছে তাহিতি দ্বীপ। দূরত্ব প্রায় ২১৫০ কিমি। অ্যাডামসটাউনে কোনও বিমানবন্দর নেই। একমাত্র নৌকা করেই পেটকিয়ার্ন দ্বীপে যাওয়া যায়। প্রতি তিন মাস অন্তর ওই দ্বীপে একটি জাহাজ আসে। ওই জাহাজে করে খাবার-সহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হয়। যা দ্বীপের বাসিন্দাদের সরবরাহ করা হয়। ২০০৪ সালে এই দ্বীপে একটি কারাগার তৈরি করা হয়েছিল। কারণ, দ্বীপে অপরাধের ঘটনা বাড়ছিল। তবে অপরাধীরা আগাম মুক্তি পাওয়ায় কারাগারের প্রয়োজন পড়ে না। বর্তমানে কারাগারটিকে হস্টেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। পিটকিয়ার্ন দ্বীপটি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে রয়েছে। দ্বীপে নিজেদের সাধ্যমতো চাষবাস করেন বাসিন্দারা। এই দ্বীপে টেলিভিশন, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এবং টেলিফোন পরিষেবা রয়েছে। তবে যোগাযোগের জন্য মূল মাধ্যম হল হ্যাম রেডিয়ো। জানা গিয়েছে, ১৭৮৯ সালে ব্রিটিশ নৌসেনার একটি দল বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। ব্রিটিশ নৌসেনার তাহিতিগামী জাহাজের দখল নিয়েছিলেন বিদ্রোহীরা। ওই বিদ্রোহী নৌসেনারা তাহিতি চলে গিয়েছিলেন। তবে সেখানে বেশি দিন থাকেননি। ব্রিটিশ প্রশাসনের শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা পিটকেয়ার্নে চলে যান। সেই সময় থেকেই নাকি ওই দ্বীপে মানুষের বাস শুরু।