ইরানে ইসরায়েলের হামলায় এখন বিশ্বরাজনীতি উত্তপ্ত। হামলা নিয়ে পাওয়া যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ এই হামলাকে সমর্থন করে বলছে, ইসরায়েল আত্মরক্ষার জন্য হামলা চালিয়েছে। আবার কেউ এই হামলার নিন্দা করছে। ইরানে হামলার সঙ্গে আমেরিকার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে সে দেশের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের পাওয়া মতামত থেকে জানা যাচ্ছে যে সমম্পর্ক না থাকলেও হামলার আগে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আমেরিকাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, তিনি আশা করেন, এটাই শেষ হামলা। মনে হয় সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছাড়া ইসরায়েল আর কোথাও হামলা চালায়নি।
ইসরায়েলের হামলার পর আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র শন সাভেট বলেন, আমেরিকা মনে করে আত্মরক্ষার অধিকার চর্চার অংশ হিসেবে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল মূলত সামরিক স্থাপনাকেই তার হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে। অথচ ইরান ইসরায়েলের সবচেয়ে জনবহুল শহর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। ইসরায়েলের ওপর হামলা বন্ধ করতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাভেট বলেন, উত্তেজনা আর না বাড়লে পাল্টাপাল্টি হামলার এই চক্রান্ত থামতে পারে। এদিকে, আমেরিকার প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট্রিক রাইডার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে আমেরিকার দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
হামলায় ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, তারা জড়িত সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শন, হিংসা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাশি এও বলা হয়, ইরানকে প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডে উস্কানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এদিকে সৌদি আরব ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম বজায় রাখা এবং উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এসব হামলা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ নষ্ট করবে। এছাড়া, ইসরায়েলি হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা অঞ্চলটিকে ব্যাপক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেবে।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, হামলায় ইসরায়েল বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে চেষ্টা করেছে। জার্মানি ইরানের আগের হামলার জবাব দিয়েছে, তার মানে এই উত্তেজনা আর না বাড়ানোর সুযোগ আছে। একই সঙ্গে তিনি ইরানকে উত্তেজনা না বাড়াতে সতর্ক করে দেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় ইরানের পাল্টা জবাব দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি সব পক্ষকে সংযত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এক সাংবাদিক সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের আগ্রাসন থেকে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অধিকার ইসরায়েলের আছে। একই রকমভাবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তাদের নতুন করে আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়ানো প্রয়োজন। সংযম দেখানোর জন্য সব পক্ষকেই তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইরানের পাল্টা জবাব দেওয়া উচিত হবে না।
ইরানে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইরাক। যেখানে ইসরায়েলের সমালোচনা করে বলা হয়, দেশটি আঞ্চলিকভাবে আগ্রাসী নীতি চালিয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাতের বিস্তার ঘটাচ্ছে। গাজা উপত্যকা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতির জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে ইরাক। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। অব্যাহত এই উত্তেজনা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর এর প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে দেশটি। এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে সংযম চর্চার ওপর জোর দিয়েছে। এছাড়া আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে এই হামলাকে এই অঞ্চলে চলমান সহিংসতাকে আরও তীব্র করে তোলার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে। ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আবদুলরাহিম মৌসাভি বলেছেন, ইসরায়েল ঠিক সময়ে এই হামলার জবাব পাবে। হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, দেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে ইরান প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্বাস আরাগচি বলেন, তারা এর আগেও তাদের সংকল্প রক্ষার প্রমাণ রেখেছে।