কলকাতা ব্যুরো: সংবিধানে বলে জনগণের দ্বারা, জনগণের পক্ষে, জনগণের জন্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তা নেই। তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। দলের দ্বারা, দলের পক্ষে, দলের জন্য কেন থাকবে। মঙ্গলবার হলদিয়ার সভা থেকে এভাবেই নাম না করে শাসকদলকে বিঁধলেন তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। বুঝিয়ে দিলেন, মানুষ ও দেশের জন্য সবসময় তৈরি তিনি।

এদিন হলদিয়ায় স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশচন্দ্র সামন্তের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষের পাশাপাশি দেশমাতৃকার মঙ্গলের জন্য তাঁর লড়াই চলবে। সতীশ সামন্ত ও জওহরলাল নেহরুর সম্পর্কের কথা তুলে মনে করিয়ে দিলেন বাংলা ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। কে কোন ভাষায় কথা বলেন, সেটা বিষয় নয়। বিবিধের মধ্যে মিলনই এ দেশের একমাত্র পথ। একইসঙ্গে এদিন শুভেন্দু স্পষ্ট করে দিলেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পুরো কৃতিত্বই মানুষের। কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির কোনও কৃতিত্ব নেই।

হলদিয়ার মঞ্চ থেকে শুভেন্দু এদিন বারবার বলেন, তিনি তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রতিষ্ঠাতা সতীশ সামন্তর আদর্শে অনুপ্রাণিত। সেই সতীশ সামন্ত যিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছ থেকে সবরকম সম্মান পেয়েছেন। তাঁকেও সবরকম সম্মান দিয়েছেন। সতীশ সামন্ত কোনওদিন জওহরলাল নেহরুকে বহিরাগত বলে ভাবতেন না। আর পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু কখনও সতীশ সামন্তকে অহিন্দিভাষী বলে ভাবতেন না। এটাই হল ভারতবর্ষ। আর ভারতকে বাদ দিয়ে হলদিয়া নয়। ভারতকে বাদ দিয়ে বাংলা নয়। আমরা ভারতীয়, আমরা বাঙালি। আমরা একসঙ্গে থাকব, সতীশবাবুর কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

শুভেন্দু এদিন আরও একবার মনে করিয়ে দেন তিনি মানুষের নেতা, জনতার নেতা। এটাই তাঁর শক্তি। তাই বহু ‘প্রতিকূলতা’কে দূরে ঠেলেও প্রায় ১০ হাজার মানুষ এদিন এসেছেন। তাঁর কথায়, কেউ উৎসাহে এসেছেন, কেউ অনুপ্রাণিত হয়ে এসেছেন, আবার কাউকে হয়তো বলা হয়েছে শুভেন্দুর অবস্থানটা এখনও স্পষ্ট নয়, তাই যাওয়া যাবে না। কিন্তু না শুনে আপনারা চলে এসেছেন। এরপরই গলা চড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, রুখতে কেউ পারবে না। আমরা ভাল কাজের জন্য লড়ব। দেশমাতৃকার মঙ্গলে লড়ব। বেকার যুবকের কর্মসংস্থান, কৃষকের অধিকার আর মিলেমিশে গণতন্ত্র রক্ষাই হবে আমাদের একমাত্র মত আর পথ।

পাশাপাশি এদিন কারও নাম না করেই শুভেন্দুর তোপ, সংবিধানে যে ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, অব দ্য পিপলের কথা আছে তা আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনতেই হবে। কেন ফর দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি, অব দ্য পার্টি ব্যবস্থা থাকবে। আর যারা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন তারা শুনে রাখুন আমি অনেক লড়াইয়ের সাক্ষী। শুভেন্দু অধিকারী কোনও পদের লোভ করে না। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরও তাই আমার সভা সমিতিতে লোক আসে।

এদিন এক প্রকার হুঁশিয়ারি দিয়েই এদিন শুভেন্দু বলেন, তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের কোনও পদাধিকারী এই মানুষকে আসতে অনুপ্রাণিত করেনি। তাই তাঁকে ‘ব্যক্তি আক্রমণ’ করে রোখা যাবে না। গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে চটে ঘেরা জায়গায় বোতাম টিপে মানুষ জবাব দেবে।

এদিন ছিল শুভেন্দু অধিকারীর ৫০ তম জন্মদিন। দাদার জন্মদিনে সর্মথকরা হ্যাপি বার্থডে পালন করেননি। শুভেন্দু নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান না করে, যোগদান করেন তাম্রলিপ্ত সরকারের প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিনে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version