কলকাতা ব্যুরো: নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এবার কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলে দিলো উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ বা বোর্ড। বৃহস্পতিবার কমিশন হলফনামা দিয়ে জানায়, তারা নিয়োগ প্যানেল ২০১৯ এর মে মাসের পর আর কোনো নিয়োগের সুপারিশ করেনি। কিন্তু এদিন বোর্ড জানায়, তারা ওই সুপারিশ গুলি কমিশন থেকে পেয়েছে। যা নথিবদ্ধ করে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কমিশনের জন্য এই বক্তব্য যথেষ্ট ড্যামেজিং। এদিন বোর্ড সভাপতিকে এক গুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী সোমবার বোর্ডের হলফনামার পর পরবর্তী নির্দেশ দেবে হাইকোর্ট।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ ডি নিয়োগের মামলায় উঠে এলো আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২৫ জনের নয়, অন্তত কয়েক হাজার নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি মামলাকারীদের। অন্যদিকে, এই মামলায় নিয়োগ নিয়ে দুই সরকারি সংস্থা স্কুল সার্ভিস কমিশনে ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো। একদিকে যখন কমিশন বলছে, ২৫ জনের নিয়োগ নিয়ে তাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। অন্যদিকে, পর্ষদের দাবি, কমিশনের সুপারিশেই ওই ২৫ জনকে নিয়োগ করেছে তারা।

নিয়োগ সংক্রান্ত এই মামলায় নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বুধবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিবকে তলব করা হয়েছিল আদালতে। সেই মতো উপস্থিত হন সচিব। কমিশনের তরফে হলফনামায় জানানো হয়, নিয়োগের সুপারিশ তারা করেনি। তাহলে কী ভাবে ওই ২৫ জন গত ২ বছর ধরে চাকরি করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেহেতু কমিশনও চাকরির বিষয়ে জানে না, তাই বুধবারই ওই ২৫ জনের বেতন বন্ধ করার নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি ২৫ জনকে আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়।

বৃহস্পতিবার সেই মামলায় আরও ৫০০ জনের নিয়োগের ক্ষেত্রে একই অভিযোগ রয়েছে বলে জানান মামলাকারীরা। তাঁদের তাদের নাম, ঠিকানা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মামলাকারীরা আদালতে জানাবেন সেই তথ্য। সেই সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদকে জানাতে হবে কী ভাবে এরা চাকরি পেয়েছিলে? বোর্ডের আইনজীবী কোয়েলি ভট্টাচার্য মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন কারণ চলতি সপ্তাহে ছুটি আছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, যেখানে বড় দুর্নীতি রয়েছে, সেখানে কোনও ছুটি হতে পারে না। আগামী সোমবার সাড়ে তিনটে ফের শুনানি হবে।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ হল এই নিয়োগের ‘অ্যাপয়েন্টিং বডি’, আর কমিশন হল ‘রিক্রটমেন্ট বডি’। এ দিন আদালতকে পর্ষদ জানিয়েছে, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তারা এই নিয়োগ করেছে। নিয়োগ নিয়ে দুই সরকারি দফতরের দ্বন্দ একেবারে প্রকাশ্যে চলে এলো। নিয়োগ সংক্রান্ত সব নথি দেখতে চায় আদালত।

মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নীতি যে হয়েছে এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আপাতত ৫০০ জনের বেশি এমন বেআইনি নিয়োগের নথি আমরা হাইকোর্টে জমা দিচ্ছি। কিন্তু সেই সংখ্যা আরও বাড়বে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version