কলকাতা ব্যুরো: দিন যত গড়াচ্ছে, ততই বৃহত্তর হচ্ছে আন্দোলন। ছাত্র সংগঠন যে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে একচুলও সরবেন না তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। বিচার চেয়ে প্রকৃত দোষীদের ধরার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে পথে বিভিন্ন সংগঠন। আমতার ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার ভবানীভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই। আর এই অভিযান ঘিরেই ধুন্ধুমার হয়ে ওঠে দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী চত্ত্বর। বেলা আড়াইটেয় শুরু হয় মিছিল। এদিন প্রথমে বাম ছাত্র-যুবরা রাসবিহারীতে জড়ো হলে তাদের ধরপাকড় করে পুলিশ। টেনে হিঁচড়ে তাঁদের তুলে নেওয়া হয় প্রিজন ভ্যানে। এমনকী রেহাই পায়নি মহিলা বিক্ষোভকারীরাও। রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায় তাদের। তারপরেও চলে বিক্ষোভ। এদিন রাসবিহারীর পাশাপাশি লেকমার্কেটেও চলে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআইয়ের প্রতিবাদ মিছিল। বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে উপস্থিত ছিল শতাধিক পুলিস।

জানা যায়, এরপরই কৌশল বদলায় এসএফআই-ডিওয়াইএফআই। অন্যত্র জমায়েত করে তারা। মিছিল এগোতে থাকে রাসবিহারীর দিকে। এদিন মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলা হয়। আনিস খান হত্যার জন্য পুলিশকেই দায়ী করে সিপিএমের ছাত্র, যুবরা। তবে এদিন মিছিল রাসবিহারীতে পৌঁছালে তা আটকায় পুলিশ। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। পুলিশের বিরুদ্ধে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ শুরু করেন এসএফআই নেত্রী ঐশী ঘোষ, সৃজন ভট্টাচার্যরা। তাঁদের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে ব্যবহার করে বিরোধী আন্দোলন দমন করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

এছাড়া এদিন মধ্য কলকাতার কংগ্রেসের জেলা কমিটির পক্ষ থেকে আনিস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয় নোনাপুকুর ট্রাম ডিপো থেকে। মিছিল থেকে আনিসকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের সভাপতি সৌরভ প্রসাদ ও মধ্য কলকাতার কংগ্রেস জেলা সভাপতি সুমন পাল এবং প্রদেশ কংগ্রেস সহ সভাপতি অসিত মিত্র। তবে এদিন নোনাপুকুর ট্রাম ডিপো থেকে মিছিল শুরু হওয়ার পর পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টের আগে মল্লিক বাজারে কাছে মিছিল আটকায় পুলিস। পুলিসের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের বচসা বাঁধে এবং পরে তারা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।

অন্যদিকে এদিন আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের দাবিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি মৌন মিছিল ও একটি সংক্ষিপ্ত সভার আয়োজন করে। সভায় বক্তব্য রাখেন JUTA-এর সভাপতি অধ্যাপক পার্থ বিশ্বাস, সম্পাদক পার্থ প্রতিম রায়, অধ্যাপক আব্দুল মতিন, কর্মচারী সংসদের সম্পাদক বিশ্বনাথ রাহা প্রমুখ। ন্যায় বিচারের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন জারি থাকবে বলে সভা শেষে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার উলুবেড়িয়া জেলে দোষীদের চিহ্নিত করতে টিআই প্যারেডে আসেন আনিসের বাবা সালেম খান। একইসঙ্গে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই যৌথ অভিযানে নামে। তারা আমতা থানা ঘেরাও করে। এদিন আমতায় পাঁচ কিলোমিটার শান্তিপূর্ণ মিছিল করে এসে পুলিস ব্যারিকেডের মুখে পড়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। তাঁরা ব্যারিকেড খুলে আমতা থানায় ঢোকার চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই ব্যারিকেডের অপরপ্রান্তে থাকা পুলিশেকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ও বোতল ছোড়ে বলে অভিযোগ। পুলিশের গার্ডও ভাঙচুর করে। এই ঘটনায় দুই পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। একজন পুলিশকর্মী মাথায় গুরুতর চোট পান বলে খবর। এরপরই এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই কর্মীরা অবস্থানে বসে। তবে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি জারি থাকে তারপরও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। তবে সময় যত গড়িয়েছে উত্তেজনা ততই বেড়েছে।

এদিনই আমতায় যায় বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দলও। বিমান বসু ও সুর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বাম প্রতিনিধি দল আমতায় গিয়ে অপেক্ষায় আনিসের বাবার সঙ্গে দেখা করেন এবং গত শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেন। এই লড়াইয়ে আনিসের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন তাঁরা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version