কলকাতা ব্যুরো: আচমকাই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়লেন বিপ্লব দেব। শনিবার দুপুরে রাজ্যপালের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিজের ইস্তফাপত্রে পদত্যাগের কোনও কারণও তিনি উল্লেখ করেননি। এক লাইনের ইস্তফাপত্রে বিপ্লব দেব শুধু আজ থেকেই তাঁর ইস্তফা গ্রাহ্য করতে অনুরোধ করেছেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিপ্লব দেব জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মার্গদর্শন অনুযায়ী এতদিন কাজ করে চলেছেন। তবে এবার দল তাঁকে সংগঠনের কাজে লাগাতে চায়।
ত্রিপুরার বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, দল চাইছে ২০২৩ নির্বাচনের আগে সংগঠনের শক্তি বাড়াতে। দীর্ঘ সময় সরকারে থাকার জন্য সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর দরকার। সংগঠন থাকলে তবেই সরকার থাকবে। তাই দল আমাকে সংগঠনে কাজে লাগাতে চাইছে।
তবে বিপ্লবের কথায় এদিন কোথাও যেন আক্ষেপের সুর শোনা যায়। তিনি বলেন, এতদিন প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে আমি কাজ করে এসেছি। এবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ইচ্ছাতেই সংগঠনের কাজ করব।
আর বিপ্লব দেবের এমন নাটকীয় ইস্তফার ঘটনাকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, এটা বিজেপির অভ্যন্তরীণ চূড়ান্ত গোষ্ঠীবাজির পরিণতি। বিজেপি একটা লবিবাজদের দল। এর সঙ্গে ত্রিপুরার মানুষ বা ত্রিপুরার উন্নয়নের কোনও সম্পর্ক নেই। পুরোটা বিজেপির অন্দরের ক্ষমতা দখলের খেলা।
পাশাপাশি কুণালের আরও আক্রমণ, যারা একজন মুখ্যমন্ত্রীর মেয়াদ শেষ করাতে পারে না, তারা কী করে মানুষের কাছে যাবে। এই সরকার এবং সরকারের মাথারা যে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না, সেটা প্রমাণিত হয়ে গেল। তবে এখানেই শেষ না করে তাঁর আরও সংযোজন আগামী দিনে ত্রিপুরায় তৃণমূল শক্তিশালী সরকার গড়বে। মাত্র ৪ মাস লড়াই করে পুরনির্বাচনে ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। এখন ত্রিপুরার সাধারণ মানুষই প্রশ্ন তোলা শুরু করেছে। ত্রিপুরার মানুষই বলছে, বাংলার মানুষ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেলে ত্রিপুরার মানুষ কেন পাবে না। প্রশ্ন উঠছে বাংলা সবকিছুতে এগিয়ে যাচ্ছে, ত্রিপুরা কেন যাবে না।
সূত্রের খবর, প্রকাশ্যে কিছু না হলেও ত্রিপুরা বিজেপির অন্দরে দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষযজ্ঞ চলছিল। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সুদীপ রায় বর্মণ-সহ কয়েকজন বিধায়কের দলত্যাগ এবং বিপ্লবের বিরুদ্ধে ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করেছে। শুক্রবার থেকেই অবশ্য ত্রিপুরায় বিপ্লবের ‘অপসারণে’র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকালই অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করছেন বিপ্লব। তারপর ত্রিপুরায় কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক ভুপেন্দ্র যাদব-সহ সহ পর্যবেক্ষকরা ত্রিপুরায় পৌঁছে গিয়েছেন। শনিবারই নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।
২০২৩ সালেই ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। তার ঠিক আগে আগে বিপ্লবের ইস্তফা বিজেপির ভাবমূর্তিকে কিছুটা হলেও ধাক্কা দিল। অনেকেই মনে করছেন বিপ্লবের ইস্তফার নেপথ্যে রয়েছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বিশ্লেষকদের মতে, বিপ্লবের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ জমা হচ্ছিল, তাতে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরাগভাজন হচ্ছিলেন। তাছাড়া, প্রশাসনের বিভিন্ন প্যারামিটারেও বিপ্লবের ত্রিপুরা সরকার ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছিল। মাত্র ৪ বছরেই ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল। সম্ভবত সেকারণেই বিধানসভা ভোটের আগে মুখ বদল করলো গেরুয়া শিবির।