কলকাতা ব্যুরো: গত এক সপ্তাহ ধরে রাজ্যের মানুষের ঘুম কেড়ে নেওয়া আতঙ্কের নাম ছিল ঘূর্ণিঝড় যশ। বুধবার সকাল যত এগিয়ে এসেছে ততই সবক্ষেত্রে পারদ চড়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন দপ্তর যৌথভাবে এই বিপর্যয় মোকাবিলায় আগে থেকেই কোমড় বেঁধে নেমেছেন। কিন্তু তারপরেও প্রকৃতির সঙ্গে এই অসম লড়াইয়ে আশঙ্কা ছিল জীবন হানির। সকলেরই চ্যালেঞ্জ ছিল, স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি যতটা ঠেকানো, তার থেকে বেশি জীবনহানি আটকানো। যদিও এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত দিল্লি থেকে সরকারিভাবে দুই রাজ্যে যশের তাণ্ডবে মোট চার জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। তার মধ্যে উড়িষ্যায় তিনজন ও এ রাজ্যে একজন।

যেখানে গতবছর আম্পানে হাজারো প্রস্তুতি ও ব্যবস্থার পরেও একশর বেশি মানুষ রাজ্যে মারা গিয়েছিলেন, সেখানে এখনো যশে তিনজনের মৃত্যুর খবর দিচ্ছে প্রশাসন। তারমধ্যে মঙ্গলবার হুগলি চুঁচুড়ায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যান দুজন। আর বুধবার মন্দারমণিতে সমুদ্রে তলিয়ে গিয়ে একজনের মৃত্যুর খবর রয়েছে।
যত প্রশাসনিক বিভাগ এই ঘূর্ণিঝড়ে একেবারে মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরানোর কাজে ছিলেন তাদের অন্যতম এন ডি আর এফ। কতটা দক্ষ এই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তা আগেও দেখা গিয়েছিল, কিন্তু বুধবার রাজ্যবাসী তা আরো প্রত্যক্ষ করল একেবারে শেষ বেলায়। যখন বেলা ন’টার পরে বোঝা গেল যে ঘূর্ণিঝড় উড়িষ্যার বালাসরে পড়েছে এবং তার ফলে কলকাতায় বড় বিপর্যয়ের আশংকা নেই।
তখন দেখা গেল ক্ষয় ক্ষতির গতি বাড়ছে পূর্ব মেদিনীপুরে এবং ভরা কোটালের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আরো মানুষ গৃহহারা হচ্ছেন। এই অবস্থায় রাজ্যে থাকা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৪৫ টি দলের থেকে কলকাতার জন্য বরাদ্দর আরও আটটি দলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পূর্ব মেদিনীপুরে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন টি দল। হলদিয়া, শংকরপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা কাকদ্বীপ এবং বসিরহাটের ন্যাজাট ও কুলপি থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ মানুষকে এদিন নতুন করে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয় পাঠানোর ব্যবস্থা করে বাহিনী।

গত দু’দিন ধরে প্রশাসন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে রিলিফ ক্যাম্প সরে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও, বহু ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ। কোথাও কোথাও পরিবারের কয়েকজন চলে গেলেও দূ-একজন বাড়িতে থেকে গিয়েছেন। আবার নদী থেকে দূরে বসবাসকারীরা তো মনে করেছিলেন, যে এবারেও জল ঢুকবে না তাদের বাড়িতে। কিন্তু হলদিয়া, কাকদ্বীপ, কুলপির মতো নদী থেকে অন্তত চার পাঁচ কিলোমিটার দূরে হঠাৎ করেই বেলা এগারটার দিকে প্রবল জলোচ্ছাসে বাড়িঘর ডুবতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন হয় মুহূর্তে জীবন বাঁচাতে বাসিন্দারা এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বাঁধের উপরে বা রাস্তায় এসে দাঁড়ান।
এরপর এই বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর কোথাও বাসিন্দাদের উদ্ধার করে ক্যাম্পে পাঠায়, দুধের বাচ্চাদের সাঁতরে জল ভেঙে তারাই পৌঁছে দেন নিরাপদ আশ্রয়। এদিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর এর ভূমিকা দেখা গিয়েছে সক্রিয়ভাবে। ভূমিকা দেখে ও প্রাণে বেচে নিজেদের সব হারিয়ে তাদের আশীর্বাদ করেছেন গ্রামবাসীরা। এবং প্রশাসনের বক্তব্য, একদিকে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও অন্যদিকে বিপর্যয় মোকাবিলায় বিভিন্ন দপ্তরের সঠিক সময়ে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার ফলে জীবনহানি উল্লেখযোগ্যভাবে ঠেকানো গিয়েছে রাজ্যে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version