কলকাতা ব্যুরো: ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুতে এমনিতেই উত্তপ্ত গোটা রাজ্য। এরই মধ্যে সোমবার গভীর রাতে রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হলো আরেক রাজনৈতিক নেতার দেহ। সিপিএমের শাখা কমিটির সম্পাদক তথা রেড ভলান্টিয়ারের দেহ উদ্ধার ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। জানা গিয়েছে মৃতের নাম সৌমেন কুন্ডু, বয়স ৪২ বছর। তিনি শিবপুর ছোট ভট্টাচার্যপাড়া শাখা কমিটির সম্পাদক। পুলিশ সূত্রে খবর, আবাদা ও সাঁকরাইল স্টেশনের মাঝে রেল লাইনে সৌমেনের দেহ মেলে। তাঁর মাথার পিছনের দিকে গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু না এর পিছনে অন্য কোনও কারণ তা খতিয়ে দেখছে জিআরপি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধে ৭টা নাগাদ বাড়ির কাছেই শিবপুরের চ্যাটার্জিহাট বাসস্ট্যান্ডে আড্ডা দিতে দেখা গিয়েছিল সৌমেনকে। এরপর রাত সোয়া ৮টা নাগাদ একবার বাড়িতে ফোন করেন তিনি। তারপর থেকেই আর হদিশ মেলেনি। সোমবার রাতেই চ্যাটার্জিহাট থানায় সৌমেনের পরিবারের তরফে নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়। এরপর গভীর রাতে সাঁতরাগাছি জিআরপি তাঁর দেহ উদ্ধার করে।

মঙ্গলবার সৌমেনবাবুর বউদি মৌসুমী কুন্ডু জানান, সোমবার রাত সোয়া ৮টা নাগাদ সৌমেনের সঙ্গে তাঁর শেষবার কথা হয়। তখন দেওর তাঁকে জানিয়েছিলেন, বাইরে একটি কাজে গিয়েছেন। ফিরতে দেরি হবে। এরপর বার বার মোবাইলে ফোন বেজে গেলেও ফোন ধরেননি। পরে মোবাইলটি নেটওয়ার্ক সীমানার বাইরে চলে যায়।

এরপর রাত ১১টা বেজে গেলেও সৌমেনবাবু বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়। পুলিশের দ্বারস্থ হন তাঁরা। এর পর রাত ২টো নাগাদ সৌমেন কুন্ডুর দাদা জয়দেব কুন্ডুকে দেহ উদ্ধারের খবর জানায় জিআরপি।

ইতিমধ্যেই সোমেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে। মৃত ব্যক্তি বাড়ির কাছেই একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। কর্মসূত্রে খুব একটা বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না তাঁর। তাহলে কী কাজে তিনি সাঁকরাইল ও আবাদা স্টেশনের মাঝখানে পৌঁছলেন তা নিয়েই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এ দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে মৃতের দাদার দাবি, তাঁর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে কারণ মৃতের মাথার পিছন দিকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে ও নাক দিয়ে রক্তক্ষরণের স্পষ্ট ছবি ধরা পড়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টের পরেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

আনিস মৃত্যুর মাত্র ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানেই হাওড়ায় দুই বাম নেতার মৃত্যু কিছুতেই ভালো চোখে দেখছে না রাজনৈতিক মহল। জানা গিয়েছে, সৌমেন কুণ্ডুর নেতৃত্বেই তাঁর এলাকায় আনিস-কাণ্ডে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবিতে মিছিল হয়েছিল। তারপরই তাঁর এই মৃত্যু “অস্বাভাবিক” বলেই মনে করছে পরিবার। তবে মাত্র হাতে গোনা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কি কারনে দুই বামপন্থী নেতার মৃত্যু? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে। তবে কি আনিস কান্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মিছিলের জেরেই কি প্রাণ গেলো সৌমেনের? নাকি এলাকায় প্রতিবাদী হিসাবে কারও চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন দুজনে? তার খেসারত দিতে হলো প্রাণ দিয়ে? রহস্যভেদ এখনও তিমিরেই।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version