কলকাতা ব্যুরো: বাঙ্গালীর রসনাতৃপ্তি মাছ-ভাত। আর প্রিয় তিনটে বেড়ানোর জায়গা বললেই উঠে আসে দীপুদা অর্থাৎ দীঘা-পুরী-দার্জিলিং-এর কথা। ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে তিনটে জায়গাই যেন আলাদা আলাদা সেন্টিমেন্টের। একটু অবসর পেলেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়া। সে একাই হোক বা পরিবারের সঙ্গে। একটু কম সময়ে, কম খরচে মানসিক শান্তির আশায় আমরা কেউ ছুটে যাই সমুদ্রের কাছে, কেউ বা পাহাড়ে।

বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম তীরে ভারতবর্ষের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত পুরী। কলকাতা থেকে প্রায় ৫১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুরী সমুদ্র আর মন্দির দুটোর জন্যই বাঙালির কাছে এক আলাদা ভালোলাগা, ভালোবাসার। পাশাপাশি কোনারকের সূর্য মন্দির, নন্দন কানন, উদয় গিরি, খন্ড গিরি, ধুবল গিরি একাধিক আকর্ষণীয় স্থান তো আছেই। তবে এবার বড়সড় সুখবর দিলো ওডিশা সরকার। করোনাভাইরাস টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার শংসাপত্র বা নেগেটিভ আরটি-পিসিআর রিপোর্ট (যে নেগেটিভ রিপোর্ট ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে হতে হবে) হাতে থাকলেই ঘুরে আসতেই পারেন পুরীতে। আগস্টের ১৬ তারিখ থেকে খুলে যাচ্ছে পুরীর জগন্নাথ মন্দির।

মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ১৬ আগস্ট (সোমবার) থেকে ২০ আগস্ট (শুক্রবার) পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকবে। তবে ওই পাঁচদিন শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দারা ঢুকতে পারবেন। ২৩ আগস্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে সকল দর্শনার্থীর জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হবে। প্রতি সপ্তাহে সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের মন্দিরে ঢুকতে পারবেন। শনিবার এবং রবিবার আমজনতার জন্য মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকবে বলে মন্দির কতৃপক্ষ জানিয়েছে। যদিও ভোগ বিতরণের ওপর জারি থাকছে বিধিনিষেধ।

অন্যদিকে ইতিমধ্যেই পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ওডিশার কোনারকের সূর্য-মন্দির। উল্লেখ্য, করোনা আবহের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই বিপত্তি বাড়ে। করোনা রুখতে বন্ধ করে দেওয়া হয় সূর্য-মন্দির। ৩ মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ২ আগস্ট আবারও খুলে গেলো ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এই মন্দির। তবে সূর্য-মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে, তাপমাত্রা পরীক্ষা ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, একদিনে ২ হাজার ভক্ত-দর্শনার্থীরা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। অনলাইনে টিকিট কাটতে হবে।

পাশপাশি দীর্ঘ ৯৪ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার থেকেই পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে নন্দন কাননের দরজাও। নন্দনকাননের ডেপুটি ডিরেক্টর সঞ্জিত কুমার জানিয়েছেন, আমরা আশা করছি একদিনে ১০ হাজারের কম মানুষ আসবেন। আর যদিও বা আসেন আমরা শিফট অনুসারে করোনা বিধি মেনেই সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। টিকিট শুধুমাত্র অনলাইন বুকিং বা চিড়িয়াখানার অ্যাপ থেকেই কাটা যাবে। তবে এই মুহূর্তে আগে থেকে কোণও পুননির্ধারণ করা যাচ্ছে না। কোভিড বিধি মেনে মাস্ক পড়া, স্যানিটাইজেশন, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং সহ সবকিছু চালু হয়েছে।

তবে এতকিছুর মধ্যেও করোনা বিধিকে কড়া ভাবেই মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে ওডিশা সরকার। সমুদ্রে পর্যটকদের গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখছে পুলিশ। ফলে অতি উৎসাহিত হয়ে নিজের মর্জি মতো কিছু করার উপায় থাকছে না। সমুদ্র স্নানের ক্ষেত্রেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে রাত ৮টা পর্যন্ত বাইরের কাজ সেরে ধীরে ধীরে হোটেলে যাওয়াই শ্রেয়। মোদ্দা কথা এই যে, দূরত্ব বিধি মেনে, দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে সময়ের মধ্যে হোটেলে ফিরে আসুন বা সমুদ্র উপভোগ করুন। তবে রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা অবধি জারি থাকছে নাইট কার্ফু। তবে নাইট কার্ফু জারি থাকলেও খুলছে পার্ক, সমুদ্র সৈকত।

বর্তমানে হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে পুরী বা ভুবনেশ্বর যাওয়ার সব ট্রেনই চলছে। রাজ্যের ভিতরে এবং আন্তঃরাজ্য বাস পরিষেবা চালু হচ্ছে ওড়িশায়। ওড়িশায় ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন বিধিনিষেধ জারি থাকছে।

২০২০ সালের জানুয়ারির শেষের সময় থেকে দেশ তথা দেশবাসী কোভিড যুদ্ধে সামিল হয়েছেন। দীর্ঘ একবছরের বেশি সময় ভ্রমণপিপাসু বাঙালির এক এবং আল্টিমেট ডেস্টিনেশন ঘরের কোণ। ২০২০ সালে মার্চের পর থেকে দীর্ঘ লকডাউনের বন্দীদশা কাটিয়ে মানুষ প্রথম পর্ব ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করলেও আটকানো যায়নি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। একটু পরিস্থিতি সামলে ওঠার আগেই আবারও থাবা বসালো দ্বিতীয় ঢেউ। আবার দেশের বিভিন্ন রাজ্যে জারি কার্ফু, বিধিনিষেধ। তার মধ্যেও একটু হাওয়া বদলের আশায় দিন গুনছেন মানুষ। সবকিছু হারিয়েও কিছু ভালো স্মৃতি বা মুহূর্তের অপেক্ষায় সমস্ত বয়সের মানুষ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version