কলকাতা ব্যুরো: প্রায় দেড় বছর ধরে যাদের নিয়ে তার ক্ষোভ বিক্ষোভ ছিল শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গেই বৈঠকে বসলেন রাজ্যের বিতর্কিত বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তর কলকাতায় একটি বাড়িতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌগত রায়ের উপস্থিতিতে বৈঠকে বসেন তিনজন। এদের একজন শুভেন্দু অধিকারী, আর অন্য দুইজন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। দু’ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। পরে সৌগত রায় বলেন, ওদের তিনজনের মুখোমুখি বসার প্রয়োজন ছিল। ভালো আলোচনা হয়েছে। সব সমস্যা মিটে গিয়েছে বলেও দাবি করেছেন সৌগত রায়।

বর্ষিয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে এ যাত্রায় বড় ফাটল তৃণমূল মেরামত করে ফেলল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কেননা ২০১৭ সালে মুকুল রায় দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে থেকেই অন্যতম ‘অভিভাবক’ হয়ে ওঠেন অভিষেক। তখন থেকেই ক্ষোভ ছিল শুভেন্দু অধিকারীর তাকে নিয়ে। তখন থেকেই শুভেন্দু নিয়ে মুকুল সঙ্গ সংক্রান্ত নানান রকম কানাঘুষো শুরু হতেই তৃণমূল, একাধিক মন্ত্রীত্ব ও বিভিন্ন জেলার সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্ব দিয়ে তাকে দলে তার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। মুর্শিদাবাদ এবং মালদার দায়িত্ব নেওয়ার পর তৃণমূলকে লোকসভায় আগের তুলনায় শক্ত মাটি উপহার দেন শুভেন্দু।
কিন্তু লোকসভা ভোটের পরেই বিজেপি ১৮ জন সাংসদ নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় উঠে আসতেই স্ট্রেটিজিস্ট পিকেকে বিধানসভা ভোটের জন্য কাজে লাগায় তৃণমূল। ফের নতুন করে সংঘাত শুরু হয় শুভেন্দুর সঙ্গে দূরত্ব বারে দলের। সেই সংঘাত বাড়তে বাড়তে মাস দুয়েক আগে থেকে তা অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে আসে। শেষ পর্যন্ত কয়েক দিন আগে মন্ত্রিত্ব সহ সবরকম প্রশাসনিক পদ ছেড়ে দেন শুভেন্দু।
যদিও এরই মধ্যে তার ক্ষোভ প্রশমনে বর্ষিয়ান সৌগত রায় যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা নেন। একদিকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা প্রকাশ্যে নাম না করে তার দিকে কড়া মনোভাব পোষণ করলেও, অন্যদিকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়কে দিয়ে তার মান ভাঙানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় তৃণমূল।
যদিও এরইমধ্যে প্রশান্ত কিশোর নিজে কাঁথিতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। এমনকি কালীঘাটে বৈঠক করার পর মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকেই একাধিক প্রভাবশালী নেতা তাকে ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করেন। তাতেও চিড়ে ভেজে নি। এবার অবশ্য শেষমেষ তাকে পিকে এবং অভিষেকের সঙ্গে বসানোর ক্ষেত্রে সফলতা পেল সৌগত-সুদীপের মত ক্রাইসিস ম্যানেজারা। যদি শেষ পর্যন্ত তাদের এই দৌত্য সত্যিই সফল হয়, সেক্ষেত্রে বিধানসভা ভোটের আগে অন্তত পাঁচটি জেলায় তৃণমূলের চাপ অনেকটাই কমবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version