কলকাতা ব্যুরো: মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের কার্নিশ থেকে রোগী পড়ার ঘটনায় রিপোর্ট চেয়ে পাঠালো স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন। ওই ঘটনায় পুলিস কী রিপোর্ট দেবে তাও স্বাস্থ্য দফতর খতিয়ে দেখবে বলে সূত্রের খবর। শনিবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ মারা গিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর মাথায় ও বুকে গুরুতর চোট ছিল। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে।

পুলিস জানিয়েছে, মৃত সুজিত অধিকারী লেকটাউনের বাসিন্দা। লোহার ছাটের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে ক্যন্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সুজিতের স্ত্রীর।  তাঁর চিকিৎসায় খরচ হয়েছিল ২৫ লক্ষ টাকা।  বহু টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল তাঁকে।  তাঁর পর থেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন সুজিত। বৃহস্পতিবার বাড়িতে খিচুনি শুরু হয়। অজ্ঞান হয়ে পড়েন বাড়িতে। এরপরই তাঁকে ভর্তি করা হয় ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে।

পরিবার সূত্রে খবর, সুজিত অধিকারীর দুই সন্তান রয়েছে।  একজনের বয়স আট এবং অপরজনের আড়াই সুজিতের ৬ মাস বয়সে মা মারা যান। অনেক ছোট বেলায় বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে যান।  এরপর ঠাকুমার সান্নিধ্যে বড় হন সুজিত।    

তবে এদিন ৮ তলার কার্নিশ থেকে রোগীর ‘ঝাঁপ’ দেওয়ার কারণ নিয়ে ধন্দে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, ওই যুবক বেশ কয়েকদিন আগে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসায় সাড়াও দেন তিনি। সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন। শনিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ছাড়া পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে কেন তিনি এরকম কাজ করলেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না হাসপাতালের আধিকারিকেরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এদিন সকাল থেকে ওই যুবকের আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। আচমকা কার্নিশে চলে যাওয়ার ঘটনাকে ‘তাৎক্ষণিক পাগলামো’ হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। তবে কী কারণে তিনি এমনটা করলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কথা অবশ্য মানতে চায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, জানলার কপাট সাধারণ মানুষের পক্ষে ভাঙা অসম্ভব। উনি কীভাবে জানলা দিয়ে কার্নিশে গেলেন সেটা দেখা হবে। ওই আধিকারিক আরও বলেন, ওই রোগীর সমস্ত চিকিৎসা বিমান আওতায় ছিল। অনেকেই খরচের সম্পর্কে নানা কথা বলছেন। ওই রোগীর বিমার টাকা অ্যাপ্রুভও হয়ে গিয়েছিল। কার্নিশে ওঠার পর পরই পুলিস ও দমকলে খবর দেওয়া হয়েছিল। মাত্র ১০-১৫ ফুট দূর থেকে পরিবারের দুই সদস্য এবং দমকলের আধিকারিকেরা দীর্ঘক্ষণ তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কথাবার্তায় চলাকালীন কোনও অস্বাভাবিকতাও লক্ষ করা যায়নি যুবকের মধ্যে। বর্তমানে ওই যুবকের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। আপাতত ভেন্টিলেশনে রয়েছে তিনি। মাথায় ও বুকে গুরুতর চোট রয়েছে যুবকের।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version