মৈনাক শর্মা
‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ শব্দটার সাথে আমরা প্রথম পরিচিত হই ২০১৬ সালে। পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে উড়ি নামক এলাকাতে ভারতীয় সেনার সন্ত্রাসবাদ দমনের অভিযান থেকে উঠে আসে সার্জিকাল স্ট্রাইক শব্দ বন্ধ। তারপর বালাকোটে বায়ু সেনার অভিযানের মধ্যে আরো ভালোভাবে আমরা সার্জিকাল স্ট্রাইক এর সাথে পরিচিত হই। আর এর থেকেই ভারতের এই পথই অনুসরণ করে ফ্রান্সের মতো বহু দেশ কখনো উড়ন্ত ড্রোন বা বায়ু সেনার মাধ্যমে উগ্রপন্থা দমনের উপায়ে পৌঁছায়। কিন্তু উগ্রপন্থাকে উস্কানি দেওয়ার জন্য বার বার বিশ্বর বেশ কিছু দেশ আঙ্গুল তুলেছে সেই পাকিস্তানের দিকেই। তাই দিল্লির উগ্রপন্থা দমনের রোড ম্যাপকেই অনুসরণ করে পাক অধিকৃত বালুচিস্থানে নিজের সৈন্য অভিযান চালাল ইরান।

সম্প্রতি পাক ও ইরানের সীমান্তে জাইস উল আদি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর নাগাল থেকে নিজেদের সেনার সদস্যদের ফিরিয়ে আনতে, সেনার অভিযান চালায় ইরান। সূত্রের খবর অনুসারে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সীমান্তে নজরদারির সময় ১৪ জন বাসিজিস (ইরানের স্বেচ্ছাসেবী সৈনি দল ) ও ইরানের বর্ডার ফোর্স এর কিছু সৈন্যকে জাইসউল আদি নামক গোষ্ঠী অপহরণ করে। যাদের মধ্যে ৫ জনকে মুক্ত করা হয় কয়েক মাস পর। কিন্তু বাকিদের মুক্তির জন্যই পাকিস্তানে এই অভিযান চালায় ইরান। তবে ইরানের এই অভিযান নিয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি পাকিস্তান।

পাকিস্তান ও ইরান নিজেদের মধ্যে প্রায় ৯৫৯ কিমি সীমানা ভাগ করে। এই সীমানার বেশিরভাগ জায়গার বাসিন্ধা বালুচিরা। যাদের নাম অনুসারে বালুচিস্থান। যা ইরান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বেশ কিছু অংশে ছড়িয়ে আছে। ইসলাম ধর্মের দুই বিভাগ শিয়া ও সুন্নীর মধ্যে বালুচরা সুন্নি মতের অনুগামী। আর যার কারণে পাকিস্তানে বেশিরভাব শিয়া মতের অনুগামীদের সাথে বিবাদের জেরে তারা বার বার পৃথক দেশের দাবি জানায়। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে আয়োজিত ক্রিকেট বিশ্ব কাপ ম্যাচে বেশ কিছুবার এক উড়ন্ত প্লেনের মাধ্যমে অভিনব উদ্যোগে প্রথমবার বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের বিদ্রোহের কথা তোলবার চেষ্টা চালায় তারা। বিদ্রোহ দমনে ইরান ও ইসলামাবাদের কঠোর পদক্ষেপ এবং দেশের ও নিজেদের অধিকারে দাবিতে ইরান ও পাক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের জন্যই গঠিত হয় জাইস উল আদির মতো বেশ কিছু সশস্ত্র সংগঠন। জাইস উল আদি প্রধানত ইরানের বিরুদ্ধেই তাদের বেশিরভাগ অভিযান চালায়। এর আগেও ২০১৭ সালে ইরানের উপর বিস্ফোরণের দায় নেয় তারা , তাছাড়া ২০১৮ সালে ভারত ও ইরানের মেলবন্ধনে তৈরী ছাবার বন্দরে পরিকল্পিত অভিযানে ইরানের ২ জন পুলিশ কর্মীর হত্যা করে।

তবে ইরানের সেনা অভিযান বা সার্জিকাল স্ট্রাইক এর কারণ যাই হোক না কেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের জনক রূপে বিশ্বের কাছে নিজের প্রমান দিয়েছে বহুবার। দিল্লির ডাকা সন্ত্রাসবাদকে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ।,ভারত নাম না করে সন্ত্রাস বাদে পাকিস্তানের উস্কানির কথা তুলেও ধরেছে দুনিয়ার কাছে। বিশ্ব ব্যাংকের বিনিয়োগ অর্থ সঠিক কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরী সংস্থা ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF ) এর প্রকোপের মুখে বার বার পড়তে হয় পাকিস্তানকে। কিন্তু আপাত অবস্থায় চীনের সাহায্যে এই প্রকোপ থেকে বাঁচলেও, সন্ত্রাসবাদকে শেষ না করলে ভবিষ্যতে FATF র আর্থিক বিনিয়োগে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারির মুখে পড়তে পারে ইসলামাবাদ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version