কলকাতা ব্যুরো: নিমতিতা বিস্ফোরণ মামলার চার্জশিট পেশ করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। প্রাথমিকভাবে পাওয়া খবর অনুযায়ী, নিমতিতা কাণ্ডের চার্জশিটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে UAPA ধারা যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বড়সড় বিস্ফোরণের ছক ছিল অভিযুক্তদের। মন্ত্রীকে হত্যা করার ছক কষা হয়েছিল। 

মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল স্পেশাল কোর্টে নিমতিতা কাণ্ডের চার্জশিট পেশ করলো জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেখানে মূল অভিযুক্ত হিসেবে দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, আবদুল সামাদ এবং শাহিদুল ইসলাম। ১৭৩ জন সাক্ষীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। 

উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটের আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে কলকাতা আসার জন্য ট্রেন ধরতে নিমতিতা স্টেশনে গিয়েছিলেন মন্ত্রী জাকির হোসেন। সেখানে বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন শ্রমমন্ত্রী জাকির হোসেন-সহ কমপক্ষে ২৩ জন। মন্ত্রীর হাতের একটি আঙুল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছে, তা জানতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিআইডি, বম্ব স্কোয়াড, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। ঘটনাস্থলে যান অনুজ শর্মাও। সিআইডি তদন্ত শুরু করলেও পরে তদন্তভার হাতে নেয় এনআইএ।

এরপরই শুরু হয় রেল-রাজ্য তরজা। রাজ্যের তরফে স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। স্টেশনে আলো না থাকার কথাও বলা হয়। রেল তদন্তকারীদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ঘটনার সময়ে স্টেশন অন্ধকার ছিল না। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বিস্ফোরণেই আলো নেভে। সিসিটিভি কিংবা আরপিএফ নজরদারিও ছিল পর্যাপ্ত। ঘটনাস্থলের পাশে রেল লাইন থেকে লোহার কনটেনারের টুকরো, ক্যাপাসিটার, বাইকের ব্যাটারির অংশ উদ্ধার করে সিআইডি। মূলত এগুলি আইইডি বিস্ফোরণেই ব্যবহার করা হয় বলে সিআইডি দাবি করে। তা হলে কী বড় কোনও পরিকল্পনাতেই এই হামলা, প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তদন্তভার হাতে নেয় এনআইএ।

রেল পুলিশের বেশ কয়েকজন আধিকারিক এবং রাজ্যের সিআইডি’র বেশ কয়েকজন আধিকারিককে এই বিস্ফোরণের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিমতিতা স্টেশনের পাশে যে সমস্ত দোকানদাররা রয়েছেন তাঁদের কাছে বিস্ফোরণের ভয়াবহতা নিয়ে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিস্ফোরণস্থল থেকে মোটরবাইক, মোবাইল উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। সেই মোবাইলটির ভাঙা অংশ উদ্ধার করে সিআইডি। সুতির একটি আম বাগানের ভিতরে ঘটনার পর মোবাইলটিকে ভেঙে একটি আম গাছের ভিতর সেটা ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ তদন্তের পর সেই মামলার চার্জশিট জমা দিল এনআইএ।

তদন্তে নেমে এক বাংলাদেশি যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি। পরে আবু সামাদ ও সইদুল ইসলাম নামে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুতির বাসিন্দা সইদুলকে জেরা করেই চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে বলে দাবি করে সিআইডি। তদন্তকারী সূত্রে খবর, ধৃত সইদুল দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। বোমা তৈরিতে পারদর্শী সে। খোদ জাকির হোসেন একাধিকবার তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সেই কারণে সুতির বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ সময়ই ভিন রাজ্যে কাটাতে হতো তাকে। সেই কারণে তৈরি হয়েছিল আক্রোশ। এরপরই জাকির হোসেনকে খুনের ছক কষে সে। তৈরি করে বোমা। নির্দিষ্ট সময়ে তা ব্যাগে ভরে পৌঁছে দেয় নিমতিতা স্টেশনে। তাদের নাম রয়েছে চার্জশিটে। 

এ প্রসঙ্গে জাকির হোসেন বলেন, “এনআইএ তদন্ত করছে। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। এলাকার মানুষ এখনও আতঙ্কিত রয়েছেন। এর যদি তদন্ত না হয়, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা আরও খারাপ হবে।”

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version