কলকাতা ব্যুরো: সমস্ত জল্পনার অবসান। প্রথম রাউন্ডের গণনা থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল কী হতে চলেছে। শেষ পর্যন্ত সেই সম্ভাবনাকেই সত্যি করে বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে পরাজিত করে দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হলেন দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu)।

গত সোমবার, ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু গণনা। যদিও ফলাফল কী হতে চলেছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। তাই দেশের বিভিন্ন অংশে বিজয়োৎসবের প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল গেরুয়া শিবির কিন্তু জয় নিশ্চিত হওয়ার খবর আসতেই সেই উৎসবের জৌলুস আরও বেড়ে যায়।

এমনিতে সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে এনডিএ পদপ্রার্থীই এগিয়ে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে। যদিও ১৮ তারিখ ভোটের দিন ক্রস ভোটিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল। অন্যদিকে, বিরোধী পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহার আবেদন জানিয়েছিলেন, শুধু রাজনৈতিক লড়াই নয়, এটা তাঁর কাছে আদর্শের লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁকে ভোট দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। দুই শিবিরেরই দাবি ছিল, ক্রস ভোট হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার গণনা শুরু হতে বোঝা যায়, অনেকটা এগিয়ে দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu)।

প্রথম রাউন্ডের শেষে দেখা যায় দ্রৌপদীর (Droupadi Murmu) প্রাপ্ত ভোট ৫৪০, অন্যদিকে বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহা পেয়েছেন ২০৮টি ভোট। দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনাতেও একই ভাবে আধিপত্য বজায় রাখেন দ্রৌপদীই।রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল পি সি মোদি জানান, তৃতীয় রাউন্ডের গণনা পর্যন্ত বৈধ ভোট ৩২১৯ ৷ তার ভোটমূল্য ৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮৩৯ ৷ এনডিএ প্রার্থী পেয়েছেন ২১৬১টি ভোট ৷ ভোটমূল্য ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৭৭ ৷ অন্যদিকে বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত পেয়েছেন ১০৫৮ ভোট৷ যার ভোট মূল্য ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৬২ ৷

প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, সারা দেশের ১০৪ জনের বেশি বিধায়ক ক্রস ভোট দিয়েছেন দ্রৌপদীর (Droupadi Murmu) সমর্থনে৷ এছাড়া বিভিন্ন দলের ১৭ জন সাংসদও ক্রস ভোট করেছেন দ্রৌপদীর পক্ষে৷ ভোটের আগে থেকেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দাবি করে আসছিলেন, এনডিএ প্রার্থী অনেক বাড়তি ভোটও পেয়ে যাবেন। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি নেতাদের সেই দাবি সত্যি প্রমাণিত হলো।

তবে দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu) তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীদের প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে ঠিক কত ব্যবধানে হারালেন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তা জানা যায়নি। তবে হার স্বীকার করে ইতিমধ্যে দ্রৌপদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যশবন্ত। এছাড়া দ্রৌপদীকে অভিনন্দন জানাতে টুইট করেছেন বিশিষ্টরা। সেই তালিকায় একেবারে প্রথমে আসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম। তিনি দ্রৌপদীর জয়কে ঐতিহাসিক বলেছেন। তাছাড়া দ্রৌপদীর বিগত দিনের কাজের কথা উল্লেখ করে তাঁর প্রশংসাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

অভিনন্দন জানিয়েছেন বিরোধীরাও। সেই তালিকায় রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। টুইটারে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি মমতা আশাপ্রকাশ করেন যে দেশের প্রধান হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রোপদী মুর্মু নিশ্চই দেশের সংবিধানকে রক্ষা করবেন ৷

তবে এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রথম থেকেই সরগরম ছিল দেশের রাজনীতি। প্রথমে মনে করা হয়, বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলেই প্রার্থী নির্বাচন করবে কেন্দ্রের শাসকদল। বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পওয়ার-সহ হেভিওয়েট বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথা বললেও কাকে প্রার্থী চাইছেন, তা জানাননি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তাই দু’দফায় বৈঠকে বসে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সেইদিন রাতেই দ্রৌপদী মুর্মুকে (Droupadi Murmu) প্রার্থী ঘোষণা করে পদ্মশিবির।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version