কলকাতা ব্যুরো: ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর কার্যালয় ফোর্ট উইলিয়ামে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হলো। বৃহস্পতিবার সকালে শহীদ স্মারকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভারতীয় সেনার তিন বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধানরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনা কর্তারা। এদিন ফোর্ট উইলিয়ামে আয়োজন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠানের। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় আসেন ৩০ জন বিশেষ অতিথি।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধ লড়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ, তেমনই ভারতও সেই যুদ্ধে বাংলাদেশের সেনাকে সাহায্য করেছিল। তাই ভারতও এই দিনটিকে বিজয় দিবস হিসাবে পালন করে। এই বছর বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী। মাঝে কেটে গিয়েছে অনেকগুলি বছর কিন্তু, আজও ম্লান হয়নি সেদিনের স্মৃতি। প্রতি বছর এই দিনটি পালন করা হয় সেনার বিজয় দিবস হিসাবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের এই অনুষ্ঠান। তাই প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশের সঙ্গে পূর্ণ মর্যাদায় বিজয় দিবস পালন করছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
বিজয় দিবস উপলক্ষে এদিনও বাংলাদেশের ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা জানালো ভারতীয় সেনাবাহিনী। এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় সেনাবাহিনী ইস্টার্ন কমান্ডের এসসি এমজিজিএস মেজর জেনারেল ভি শ্রীহরি ও কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। অনুষ্ঠানে ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান বলেন, ৫০ বছর আগে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই যুদ্ধে ভারত সরকারের কাছ থেকে আমরা সর্বরকম সমথর্ন পেয়েছি। তাদের নৈতিক, কুটনৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন পেয়েছি। তাঁরা আমাদের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। এই জন্য আমি ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী, সামরিক সংস্থাসহ ভারতের জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের এই মহান ত্যাগে আমি গর্বিত।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লির জাতীয় যুদ্ধ স্মারকে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংও। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টায় দিল্লির ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে পৌঁছন। সেখানে সুবর্ণ জয়ন্তী বিজয় মশাল অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। প্রথমেই তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে যে জওয়ানরা শহিদ হয়েছিলেন, তাদের স্মৃতিসৌধে গিয়ে পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপরে স্বর্ণীম বিজয় মশাল প্রজ্বলন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
গত বছর বিজয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে চারটি মশাল জ্বালিয়েছিলেন, সেই চারটি মশাল কন্যাকুমারী থেকে সিয়াচেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছিল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধক্ষেত্র ও শহিদ জওয়ানদের বাড়িতেও সেই মশাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এক বছর বাদে সেই মশাল ফের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই চারটি মশাল এক করে একটি মশাল জ্বালান, যা আজীবন প্রজ্বলিত থাকবে।
উল্লেখ্য, এ দিন সকালেই প্রধানমন্ত্রী টুইট করে বিজয় দিবসের গুরুত্ব সকলকে মনে করিয়ে দেন। তিনি টুইটে লেখেন, বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তীতে মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বীর জওয়ানদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কথা আমাদের মনে রয়েছে। আমরা মিলিতভাবে অত্যাচারী শক্তিগুলির সঙ্গে লড়াই করেছি এবং তাদের পরাজিত করেছি। আজ ঢাকায় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দজীর উপস্থিতি প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দেশের সেনাবাহিনীকে। তাঁর টুইট, ‘১৯৭১ সালে সাহসিকতার সঙ্গে যেসব বীররা যুদ্ধ করেছিলেন, তাঁরা সকল ভারতীয়র মনে থাকবেন। তাঁদের সকলের আত্মত্যাগকে কুর্নিশ জানাই। আমাদের সেনাবাহিনীর অবদানকেও উদযাপন করার দিন আজ। আজও সেনার সাহসিকতা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।’
রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও এদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসবে যোগ দেন। সেখানেই তিনি শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন। ঢাকার ন্য়াশনাল প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয় প্য়ারেড করেন বাংলাদেশের জওয়ানরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এছাড়াও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদও উপস্থিত ছিলেন।