কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। গত চারদিনে চার গুণ সংক্রমণ বেড়েছে রাজ্যে। নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে রবিবার মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী নির্দেশিকা জানালেন। ৩ জানুয়ারি থেকেই রাজ্যে চালু হচ্ছে বিধিনিষেধ।

ওমিক্রন রুখতে কী কী বিধিনিষেধ জারি হল রাজ্যে, দেখে নিন একঝলকে – 

লোকাল ট্রেনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে যাতায়াত চলবে। তবে সন্ধে ৭টার পর লোকাল ট্রেন বন্ধ, মেট্রো চলবে।

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ , ৫০ শতাংশ কর্মীরা আসতে পারেন।

‘দুয়ারে সরকার’ একমাস পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু।

ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে বিমান অবতরণ সাময়িকভাবে বন্ধ।

১০ শতাংশ আরটি-পিসিআর বাধ্যতামূলক।

১০০ শতাংশ বিদেশ ফেরতের র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করাতে হবে।

সরকারি অফিস, কর্পোরেশন- সহ ৫০ শতাংশ, বেসরকারি অফিসও চলবে একই রকম পদ্ধতিতে।

সোমবার থেকে বন্ধ সুইমিং পুল, পার্লার, জিম, স্পা, পার্ক, চিড়িয়াখানা।

শপিং মল, মার্কেট কমপ্লেক্সে ৫০ শতাংশ ক্রেতার প্রবেশের অনুমতি, খোলা থাকবে রাত ১০টা অবধি।

বাড়লো নাইট কারফিউয়ের সময়সীমা। রাত ১০ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ জারি।

রেস্তরাঁ, বারে ৫০ শতাংশ প্রবেশ রাত ১০টা অবধি।

সিনেমা হল, থিয়েটারে ৫০ শতাংশ দর্শকের প্রবেশ। খোলা থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

তবে সামনেই গঙ্গাসাগর মেলা ও কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু জানায়নি রাজ্য। আগামী ৭ থেকে ১৪ জানুয়ারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হওয়ার কথা। তবে রবিবার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ৪ তারিখ অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুর ২ টোয় করা হয়েছে। এই মর্মে নির্দেশিকাও জারি করেছে নবান্ন। তবে যেখানে খোলা থাকছে সিনেমা হল, সেই ক্ষেত্রে তবে কি ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়েই কি এবারের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ভাবনা? জল্পনা কিন্তু উড়িওয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

পাশাপাশি ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে গঙ্গাসাগরে ভিড় জমাবেন তীর্থযাত্রীরা। ইতিমধ্যেই গঙ্গাসাগর গিয়ে সমস্ত রকম প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের যাবতীয় ব্যবস্থা রেখেই গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন করা হবে বলে জানান মমতা। তবে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে গঙ্গাসাগর মেলা বা কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মতো দুটি উৎসব যেখানে জনসমাগম চরমে পৌঁছবে। সেগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও রাজ্য সরকার এই মুহূর্তে এই বিষয় নিয়ে কিছু পাকাপাকিভাবে ঘোষণা করে। সোমবার থেকে বিধিনিষেধ চালু করে পরিস্থিতি বিচার করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। এছাড়া শনিবার সন্ধ্যায় নবান্নের তরফে সরকারিভাবে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের শিবির বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ৩ জানুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের স্টুডেন্ট উইক অনুষ্ঠানও।

প্রসঙ্গত, রাজ্যে ক্রমশই চওড়া হচ্ছে করোনার থাবা। নতুন করে বাংলার কোভিড গ্রাফ চিন্তায় ফেলছে বিশেষজ্ঞদের। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় লম্বা লাফ দিয়েছে দৈনিক করোনা পরিসংখ্যান। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শনিবারের বুলেটিন জানাচ্ছে, একদিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫১২ জন। যা গতদিনের তুলনায় প্রায় এক হাজার বেশি। একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের এবং সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯১৩ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ২৫৯০। বেড়েছে পজিটিভিটি রেটও। রাজ্যের বর্তমান পজিটিভিটি রেট ১২.০২ শতাংশ।

শহরের করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় কেবলমাত্র কলকাতা শহরেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৯৮ জন। দু’জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুও হয়েছে শহরে। উত্তরোত্তর এই সংখ্যা বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকমহল। বিশেষজ্ঞদের মতে শহরের দৈনিক গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনে রয়েছে অসতেচন জনতার লাগামছাড়া ভিড়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version