কলকাতা ব্যুরো: নির্বাচনের আগে ঠিক যতটা গর্জেছিলেন ফলাফল ঘোষণার পর ততটা বর্ষান নি। তবে দিন যত গড়িয়েছে তত বেশি সুর নরম করে পুরানো ঘরে ফেরার আশায় দিনরাত জপে চলেছেন ঈশ্বরের নাম। নির্বাচন মিটতেই সরাসরি তৃণমূলে ফেরার কথা না জানালেও, বর্তমান দল বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। যদিও এতদিন পর্যন্ত লাভের লাভ কিছুই হয়নি। কিন্তু হাল ছাড়েন নি তিনি।
হ্যাঁ, তিনি বর্তমানে বিজেপি নেতা, ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেসের “গুড বয়” হিসাবে পরিচিত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন দলের হাইকম্যান্ডের কাছে যাওয়ার আগে ধীরে ধীরে গ্রাউন্ড লেভেলকে শক্ত করার কাজেই মন দিয়েছিলেন। একে একে পুরানো দলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করেছেন, কথাও বলেছিলেন। স্ত্রী হারানোর পর ছোটো ভাইয়ের মতো সদ্য নির্বাচনের পর ঘরে ফেরা মুকুল রায়ের পাশেও ছোট ভাইয়ের মতো দাঁড়িয়ে জানান দিয়েছিলেন “তিনি আছেন”। বহুদিন ধরে জল্পনা চলছিল “রাজীবের ঘর ওয়াপসি” নিয়ে। তবে রাজীব বা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কেউ কোনদিনও মুখ খোলেন নি।
তবে শুক্রবার সেই জল্পনা যেন অন্য মাত্রা পেলো। সূত্রের খবর, এদিন সন্ধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি গোপন বৈঠক করেন রাজীব। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে ৩০ মিনিট তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হয় বলে খবর। এদিন দু’জনের মধ্যে সদর্থক কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
খাতায় কলমে বিজেপি নেতা হলেও ভোটের পর থেকেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। একুশের ভোটে হারের ধাক্কা সামলাতে না পেরে একাধিক ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে একদিকে যেমন উঠে এসেছে নাম না করে শুভেন্দুর বিজেপিতে “পরিবারতন্ত্র” প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ অন্যদিকে তাঁর ফেসবুক ওয়ালে জায়গা করে নিয়েছে শাসকদল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের সমর্থনের প্রসঙ্গ। একইসঙ্গে কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়েই জ্বালানির মূল্যহ্রাসের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একাধিকবার “বেসুরো” হয়েছেন রাজীব।
উল্লেখ্য, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় তাঁর গলায় ছিল অভিমানের সুর। তবে তিনি বারবার জানিয়েছিলেন এবং তাঁর ব্যবহারে তিনি পরিষ্কার করতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আদর্শ। তাই দলনেত্রীর ছবি বুকে নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে অফিসিয়াল বিচ্ছেদের সময়ও তিনি বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। কিন্তু একুশে বিজেপির ভরাডুবির পর গেরুয়া শিবিরের অন্দরে একাধিকবার বেসুরো হন রাজীব। একাধিকবার তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে দলবিরোধী মন্তব্য। ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে দূরত্ব বেড়েছে পদ্ম শিবিরের সঙ্গে। এরপর বিজেপির লাগাতার চলা কর্মসূচিতেও দেখা যায়নি রাজীবকে।
তবে “খেলা” হলো তখনই যখন বিজেপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে আবার পুরানো ঘরে ফিরলেন মুকুল রায়। মুকুল তৃণমূলে যোগদানের পরই পুরনো দলে ফেরার তৎপরতা বাড়ান রাজীব। একুশের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর মমতা সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছিলেন যারা ফিরে আসতে চান, আসতে পারেন। তবে “গদ্দার”-দের কোণও জায়গা দলে নেই।
কিন্তু রাজীবের “ঘর ওয়াপসি”-এর জল্পনা প্রকাশ্যে আসতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ডোমজুড়ের তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। তবে জল যত গড়িয়েছে নিজেকে নিভৃতবাসে রেখে মৌনব্রত পালন করে গিয়েছেন আর সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন। আর তাতেই এক শতাংশ হলেও ক্ষতে প্রলেপ পড়েছে। কিন্তু শুক্রবার প্রায় ৩০ মিনিট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, এত দীর্ঘ বৈঠক যখন হয়েছে তখন পরিবেশ অনুকূলই আছে। তাহলে কি রাজীবের তৃণমূলে ফেরা শুধু আর কিছু সময়ের অপেক্ষা? জারি রইলো জল্পনা।