কলকাতা ব্যুরো: করোনা ভ্যাকসিনের যোগান নিয়ে রাজ্য কেন্দ্র সংঘাত আরও চরমে উঠলো। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রথমে ফোনে এবং পরে চিঠি লিখে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর কিছুক্ষনের মধ্যে চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে টুইট করে বন্যা পরিস্থিতির ঘটনায় মৃত ও আহতদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়। কিছুটা হলেও সেই ক্ষতে প্রলেপ পড়লেও বৃহস্পতিবার আবার রাজ্যে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনের অভাবের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি দু’পাতার চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই চিঠির জবাবেই এখনও পর্যন্ত কত টিকা পেয়েছে বাংলা তার বিস্তারিত হিসাব দিল কেন্দ্র। আর কেন্দ্রের পাঠানো এই হিসাবের পর শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।

পর্যাপ্ত টিকা পাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ, বারবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সপ্তাহে দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলার জন্য পর্যাপ্ত করোনা ভ্যাকসিনের আবেদন করেছিলেন মমতা। প্রধানমন্ত্রী তরফে আশ্বাস মিললেও, বাস্তবে রাজ্যে করোনা টিকার ঘাটতি মেটেনি এখনও। তা নিয়ে ফের বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন চিঠিতে মমতা স্পষ্ট লেখেন, বহুবার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকী মোদীর সঙ্গে দেখা করেও এ নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরও বাংলা পর্যাপ্ত কোভিড টিকা পাচ্ছে না। যার ফলে রাজ্যবাসীকে টিকাদানের সমস্যা হচ্ছে। এমনই যাবতীয় সমস্যার কথা জানিয়ে ফের এদিন প্রধানমন্ত্রীকে ২ পাতার চিঠি লেখেন মমতা। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী টিকাদানের বিস্তারিত হিসেব তুলে ধরে বলেন, এই মুহুর্তে বাংলায় রোজ ৪ লক্ষ টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ১১ লক্ষ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকাঠামো রয়েছে রাজ্যে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে, তা তুলনায় অনেকটাই কম। এখনও ১৪ লক্ষ ভ্যাকসিন প্রয়োজন, কিন্তু কেন্দ্র থেকে মিলেছে মাত্রা ২.৬৮ লক্ষ।

পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে এও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্য যেমন উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটকে যথেষ্ট ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বাংলার সঙ্গে এই বঞ্চনা কেন? কেন্দ্রের এই আচরণের জন্যই এ রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ এখনও রোজ টিকার লাইনে দাঁড়িয়ে শূন্য হাতে ফিরে যাচ্ছেন।
মমতা চিঠিতে আরও জানান, এই মুহূর্তে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। কিন্তু পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না পেলে, এই কড়া বিধিনিষেধ জারি করে করোনা পরিস্থিতিকে যে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে, তা পুরোটাই বৃথা যাবে। অন্যদিকে, আবার অসম ত্রিপুরাতেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সেই দিকও বিচার করে দেখার আর্জি জানান মমতা।

মমতার লেখা সেই চিঠির জবাব দিয়েছে কেন্দ্র। এখনও পর্যন্ত কত টিকা পেয়েছে বাংলা তার বিস্তারিত হিসাব দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে টিকায় বঞ্চনার অভিযোগ উড়িয়ে চিঠিতে কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের মধ্যে বাংলাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ টিকার ডোজ পাঠিয়েছে কেন্দ্র। দেশে সবথেকে বেশি টিকা পেয়েছে মহারাষ্ট্র। তারপরই পেয়েছে বাংলা। টিকার ডোজের বিস্তারিত হিসাব দিয়ে কেন্দ্রের দাবি এখনও পর্যন্ত ৫২ লাখ ভ্যাকসিন ডোজ বাংলাকে পাঠানো হয়েছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version