কলকাতা ব্যুরো: আপনারা প্রতিজ্ঞা করুন, কোনও ধান্দাবাজ নেতাদের পাহাড়ে অশান্তি করতে দেবেন না। জিটিএ’র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পাহাড়াবাসীকে এই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। পাহাড়ে তিনি উন্নয়নের চেষ্টা করলেও তা হতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ দিন মমতা (Mamata Banerjee) বলেন, পাহাড়ে এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এর আগে দেখিনি। পাহাড়বাসী দেখিয়ে দিল তারা যা পারে তা অন্যান্যরা পারে না। সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই। এর আগে গত দশ বছরে ৭ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু সঠিক ভাবে কাজ হয়নি৷

পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী হদিশ দেন পাহাড়ের কর্মসংস্থানের। পর্যটকদের কাছে ‘পাহাড়ের রানি’কে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার উপায়ও বাতলে দিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। শান্তি বজায় থাকলে সমতলের সিলিকন ভ্যালির মতো পাহাড়েও আইটি হাব তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে আইটি সংস্থাগুলির সঙ্গে রাজ্যের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হবে। পাশাপাশি পাহাড়ের যানজট, পানীয় জলের সমস্যার সমাধান থেকে কর্মসংস্থান নিয়ে একাধিক বড় ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এক নতুন দার্জিলিং গড়ার স্বপ্ন দেখালেন তিনি।

উল্লেখ্য, দশ বছর আগে শেষ জিটিএ নির্বাচন হয়েছিল। তখন পাহাড়ের সর্বেসর্বা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুং। তাঁর নেতৃত্বেই জিটিএ-তে বোর্ড গঠন করে মোর্চা। রাজ্যের সঙ্গে সখ্যতাও বজিয়ে রেখেছিলেন বিমল গুরুং কিন্তু তারপরে ২০১৭ সালে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলনে গোটা পাহাড়ে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী দশ বছরে রাজ্যের তরফে জিটিএ-কে দেওয়া সাত হাজার কোটি টাকার হিসেবও নেই। সেই অডিট নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। আর পাহাড় পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে ‘ধান্দাবাজ’ নেতারই রয়েছেন বলে এ দিন জিটিএর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের খোলা মঞ্চ থেকে সাফ জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এক নজরে দেখুন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা!

  • ২০০ একর জমিতে নতুন শিল্পনগরী হবে। নতুন শিল্পনগরীতে থাকবে হোম স্টে, শপিং মল, ওয়্যার হাউজ, পর্যটকদের জন্য থাকার জায়গা।
  • আইটি হাব হবে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পংয়ে।
  • দার্জিলিং- কার্শিয়াংয়ে আইআইটি হাব তৈরির পরিকল্পনা।
  • পাহাড়ে যাঁরা ফুটপাথে দোকান দেন, তাঁদের জন্য তৈরি হবে বড় দোকান। ফলে কমবে যানজট। জীবিকার সুরক্ষা পাবেন ওই দোকানদাররা।
  • মংপুতে হবে হিল ইউনিভার্সিটি। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া ক্যাম্পাস পাবে পাহাড়বাসী।। ডাওহিলে হবে এডুকেশন হাব।
  • হর্টিকালচারের হাব তৈরি হতে পারে দার্জিলিংয়ে।
  • দার্জিলিংয়ে তৈরি হবে মাল্টি-লেভেল কার পার্কিং।
  • কার্শিয়াং থেকে রোহিনী পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে রোপওয়ে।
  • চা বাগানের ভিতর পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থার পরিকল্পনা। পর্যটক টানতে তৈরি হবে হোম স্টে।
  • মিরিকের জন্য ইকো টুরিজমের পরিকল্পনা।
  • পাহাড়ে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রুখতে বিশেষ পরিকল্পনা করবে রাজ্য।
  • রিজার্ভার তৈরি করে ঝোরার (ঝর্ণা) জল সংরক্ষণের ভাবনা। ছোট ছোট ট্যাঙ্ক কিনে ঝোরার জল সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কীভাবে এই কাজ হবে তা পরিকল্পনা করতে হবে।
  • পানীয় জলের প্লান্ট তৈরি হবে পাহাড়ে।
  • পাহাড়ের মহিলারা গাড়ি চালালে গাড়ি কেনার জন্য ঋণ দেবে সরকার। দার্জিলিংয়ের জন্য বিশেষ প্রকল্প।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) অভিযোগ, তিনি পাহাড়ের উন্নয়ন করতে চাইলেও বাধ সেধেছিলেন পাহাড়ের নেতারাই। প্রকল্পের টাকা নয়ছয় থেকে একাধিক দুর্নীতি হয়েছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার। তা হল, পাহাড়ে জিটিএ’র দ্বিতীয় পর্যায়ে মোর্চা নেতা বিমল গুরুং, জিএনএলএফ নেতা মন ঘিসিংদের আর কোনওভাবেই গুরুত্ব দিতে তিনি নারাজ। পাহাড়ের কোনও নেতাই যাতে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে বা করতে চাইলে যাতে পাহাড়বাসীরাই প্রতিরোধ করেন তার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Oath taking ceremony of elected members of Gorkhaland Territorial Administration Sabha 2022

Oath taking ceremony of elected members of Gorkhaland Territorial Administration Sabha 2022

Posted by Mamata Banerjee on Monday, July 11, 2022

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এর আগে অনেক গড়বড় হয়েছে। পাহাড়ে অনেক ভূমিকম্প হয়। এখন ভূমিকম্প হলে কী হবে জানি না। কাজ করার কোনও সিস্টেম ছিল না। এবার সিস্টেম ফলো করতে হবে। আমি পূর্ণ সহযোগিতা করব। আগে অনেক প্রকল্প নিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ করতে দেয়নি। আমি বন্ধুত্ব চাই, ঝগড়া চাই না। আমি পাহাড়ে কিছু নিতে আসব না। দিতেই আসব।

পাশাপাশি এদিনের ভাষণে পাহাড়ের ইতিহাস তুলে ধরে আক্ষেপ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তাঁর দাবি, এর আগেও মন ঘিসিং, বিমল গুরুংদের নিয়ে জিটিএ’র মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি কায়েম করার চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু দেখা গিয়েছে, সে সময় বিমল গুরুং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ছেড়ে বিজেপির হাত ধরে পাহাড়ে অশান্তি শুরু হয়। ফের সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা-ই চাইছেন মমতা। পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রী সবরকম সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version