কলকাতা ব্যুরো: হাঁসখালির ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে জোর বিতর্ক। সেই বিতর্কের জল গড়ালো হাইকোর্ট পর্যন্ত। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাঁসখালির ঘটনা খারাপ। গ্রেফতার করা হয়েছে। একটা মেয়ে নাকি ধর্ষিতা হয়ে মারা গিয়েছে? ধর্ষিতা বলবেন নাকি অন্তঃসত্ত্বা? শুনেছি, ছেলে-মেয়ে দুটোর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমি পুলিশকে বলেছি, ঘটনাটি কী দেখতে?’ মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিলেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। গোটা বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব।

চিঠিতে সব্যসাচী লিখেছেন, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান একজন নাবালিকার চরিত্র নিয়ে মন্তব্য করছেন। শিশু সুরক্ষা আইন লঙ্ঘন করেছেন। একজন নির্যাতিতার সম্পর্কে কী করে এসব কথা বলেন তিনি? আদালত স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করুক। এই ঘটনায় সঙ্গে হাথরসের ঘটনার তুলনা করা যায় বলেও দাবি করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মেয়েটি মারা গিয়েছে ৫ তারিখে। অভিযোগ জানানো হয়েছে ১০ তারিখে। যদি কারও কোনও অভিযোগ থাকে তবে ৫ তারিখে অভিযোগ দায়ের করলেন না কেন?’

মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন  নির্ভয়া অর্থাৎ ২০১২ দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে মৃতার মা। তিনি বলেন, একজন নারী হয়েও তিনি যদি এমন মন্তব্য করেন, তাহলে তিনি যে পদে আছেন তার সঙ্গে তা তাঁর শোভা পায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ধর্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নির্ভয়ার মা আরও বলেন, এই মামলার সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত এবং দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত। এই ধরনের মন্তব্যগুলি এই ধরনের অপরাধকে উৎসাহিত করে, এটি ক্ষতিগ্রস্থদের প্রভাবিত করে এবং যারা এই ধরনের অপরাধ করে তাদের উৎসাহিত করে। এই ধরনের রাজনীতিবিদরা কেবল তাদের ভোট ব্যাংকের দিকে দেখেন।

অন্যদিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন মাননীয়া সব ব্যাপার হালকা করে নেন। এর ফলে তাঁর প্রশাসনও বুঝে গিয়েছে তাঁর করার কিছু দরকার নেই। যারা এমন করেছে তারা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। তবে বাংলার এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে সামান্য সমবেদনাটুকু পাওয়া যাবে না, এটা আশা করা যায় না।

৪ এপ্রিল হাঁসখালির ওই নাবালিকাকে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তার। ভোরে মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, নাবালিকাকে কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। জোর করে দেহ স্থানীয় শ্মশানে দাহ করিয়ে দেন ওই তৃণমূল নেতা এবং তাঁর অনুগামীরা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরও পুলিস দ্রুত পদক্ষেপ করেনি। পরে গ্রেফতার করা হয় মূল অভিযুক্ত ব্রজগোপাল গোয়ারীকে। আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version