কলকাতা ব্যুরো: নন্দীগ্রামের হারের ক্ষতে অবশেষে জয়ের প্রলেপ দিল ভবানীপুর। ৫৮ হাজার ৩৮৯ ভোটে জিতে আরও একবার ভবানীপুরের বিধায়ক হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই জয়ের ফলে আরও সাড়ে চার বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকতে তাঁর সামনে আর কোনও সাংবিধানিক জটিলতা রইল না। ২০১১ সালের থেকেও এবার বড় ব্যবধানে জিতলেন মমতা। 

প্রসঙ্গত, ২০১১ সাল থেকেই ভবানীপুর তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ৷ ভোটের ব্যবধানে হেরফের হয়তো হয়েছে, কিন্তু ভবানীপুর থেকে গিয়েছে ঘাসফুলের দখলে। এবারও তাই হলো ৷ আর এই জয় প্রত্যাশিতই ছিল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা গেল ২০১১ সালের উপ-নির্বাচনের রেকর্ডও ভেঙে দিলেন মমতা ৷ সেবারের থেকে অনেক বেশি ব্যবধানে জিতলেন তিনি ৷

প্রসঙ্গত, নির্বাচনী রাজনীতিতে এটা মমতার দশম জয় ৷ আর ভবানীপুর থেকে এই নিয়ে তিনবার জিতলেন মমতা। ১৯৮৪ সালে প্রথমবার নির্বাচনী রাজনীতিতে নেমেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবার যাদবপুর লোকসভা আসনে তিনি হারান সিপিএমের হেভিওয়েট সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে ৷ যদিও সেই জয়ের রেশ তিনি ধরে রাখতে পারেননি পাঁচবছর পর৷ ১৯৮৯ সালে সিপিএমের মালিনি ভট্টাচার্যের কাছে তিনি হেরে যান৷ দু’বছর পর আরও একটি লোকসভা নির্বাচনে মমতা প্রার্থী হয়েছিলেন কলকাতা দক্ষিণ থেকে৷ তার পর থেকে টানা তিন দশক ধরে তিনি নির্বাচনী রাজনীতিতে অজেয় ছিলেন৷ লোকসভা ও বিধানসভা মিলিয়ে টানা আটটি নির্বাচনে জেতেন ৷

কিন্তু সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর সেই বিজয়রথ থামে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে৷ সেখানে তিনি বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে দু’হাজারের কিছু কম ভোটে হেরে যান৷ প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে বিধানসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। সেই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। ২ মে বিধানসভার ফল ঘোষণার দিন দেখা গিয়েছে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। যদিও গণনা পদ্ধতি এবং এই ফল ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেই বিহিত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মমতা। 

নন্দীগ্রামে হারলেও প্রতিবারের মতো নির্বাচনে তিনিই তৃণমূলের কান্ডারি ছিলেন৷ তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চেয়েই ২১৩টি কেন্দ্রের ঘাসফুল প্রার্থীদের জিতিয়েছেন বাংলার ভোটাররা। সেই কারণে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ভবানীপুর থেকে পদত্যাগ করে মমতাকে লড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন ৷ আর সেই উপ-নির্বাচনে ভবানীপুরের মানুষের আশীর্বাদ দিয়ে তৃতীয়বারের জন্য বিধায়ক হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

এদিন জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভবানীপুরের মানুষকে ধন্যবাদ জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘ভবানীপুরের মানুষের কাছে চিরঋণী আমি।’ তিনি বলেন, ‘অনেক চক্রান্ত হয়েছে। সব চক্রান্তকে জব্দ করে দিয়েছে ভবানীপুর।’ এদিন জয় ঘোষণা হতেই কালীঘাটের বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন মমতা। তাঁর বাড়ির সামনে তখন কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। উচ্ছ্বসিত জনতার উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানান তিনি। মমতার সঙ্গেই ছিলেন তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা। ছিলেন দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

মমতা এদিন বলেন, ‘ভবানীপুর জায়গাটা ছোট কিন্তু, এর বৃত্তটা বিশাল বেশি। সারা ভারত আজ ভবানীপুরের দিকে তাকিয়েছিল। এখানকার মানুষ অনেক উৎসাহ, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আমি চির ঋণী।’ পাশাপাশি, তিনি জানান ভবানীপুরের চিরকালের ট্রেন্ড ভোট কম পড়া। তা সত্ত্বেও এবারে প্রতিটি ওয়ার্ডে তৃণমূল জয়ী হওয়ার সুখবর দেন মমতা। পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তিনজন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তাই ভিক্ট্রি সাইন দেখাব না। বলব, এক দুই তিন। মানুষকে ধন্যবাদ দিন।’

অন্যদিকে, সকলকে সতর্ক করে এদিন মমতা বলেন, ‘আমরা সবাইকে মিছিল করতে নিষেধ করেছি। বন্যায় যারা বিপর্যস্ত তাদের পাশে থেকে সেবা করার কাজে নিজেদের নিযুক্ত করতে পারলে সবথেকে খুশি হব।’

তবে লড়াইয়ের মদয়ানে নেমে হুঙ্কার দিলেও শেষ পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখতে পান নি বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রিওয়াল। শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বহু পিছিয়ে প্রিয়াঙ্কা। তিনি পেয়েছেন ২৪ হাজার ৩৯৬টি ভোট। এদিকে ভোটে পরাজিত হয়েও বিজেপি প্রার্থী জানালেন, ‘ভবানীপুর আমি ছাড়ব না’। আমি দিদিকে জয়ের জন্য অভিনন্দন এবং প্রণাম জানাই।’

কিন্তু, এরপরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে।’ প্রিয়াঙ্কা এদিন আরও বলেন, ‘হার স্বীকার করে নিয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদালত বা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হব না।’ পাশাপাশি এদিন দলের কর্মী সমর্থকদের তাঁর পাশে থেকে সবসময় সাহায্য করার জন্যও কুর্ণিশ জানান প্রিয়াঙ্কা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version