এই দুনিয়ায় এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মেলেনা। ঠিক তেমনই এই পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে এমন কিছু ঘটে যার জন্য আমাদের কৌতূহলী মন আরও আগ্রহী হয়ে ওঠে। যখন জানা যায় এই পৃথিবীতে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে কোনরকম সিগন্যাল কাজ করেনা। সেই জায়গাটি হল মেক্সিকোর এক মরুভূমি অঞ্চল। ১৯৩০ সালে যখন পাইলট ফ্রান্সিসকো সারাবিয়া এই অঞ্চলের উপর দিয়ে তাঁর প্লেনকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই হঠাৎ ঘটে যায় আশ্চর্য এক ঘটনা। দেখা গেল প্লেনের যন্ত্রপাতিগুলি একে একে নিজেদের কাজে একরকমভাবে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়লো এবং শেষমেশ সমস্তরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গেল। ফলে বাধ্য হয়ে পাইলট ফ্রান্সিসকো সারাবিয়া এমারজেন্সি ল্যান্ডিং করতে বাধ্য হলেন। কেবলমাত্র ফ্রান্সিসকো একাই যে অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তা নয়। তালিকায় আছেন আরও অনেকেই।

যেমন ১৯৬৬ সালে মেক্সিকোর জাতীয় তেল কোম্পানি পেমেক্স এক অনুসন্ধানকারী দলকে সেখানে পাঠায়। যাদের কাজ ছিল মূলত এটা খতিয়ে দেখা যে আদৌ এই অঞ্চলের উপর দিয়ে কোনো লাইন করা সম্ভব কিনা। কিন্তু সেই অভিযানও একেবারেই  আশানুরূপ হয়নি। তাদের কাজ সঠিকভাবে না এগোনোর প্রধান কারণ ছিল এখানে তারা কোনোরকম রেডিও সিগন্যাল পাচ্ছিলেন না। ফলে তারা গোটা পৃথিবী থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। পেমেক্সের পাঠানো সেই অভিযানকারী দলের প্রধান ছিলেন হ্যারি দে লা পেনা। যিনি এই অঞ্চলের নামকরণ করেন ‘লা জোনা দেল সিলেন্সিও’। যার সঠিক বাংলা অনুবাদ করলে হয় নীরব ভূমি।

এই অঞ্চলে এরকম অদ্ভুত ঘটনা আরও বহু ঘটেছে। ১৯৭০ সালের ১১ জুলাই আমেরিকার মিলিটারি বেস থেকে অ্যাথেনা নামক এক মিসাইল পরীক্ষার জন্য নিক্ষেপ করা হয়। এই মিসাইলটির যাওয়ার কথা ছিল নিউ মেক্সিকোর ওয়াইট স্যান্ডস অঞ্চলে। কিন্তু মাঝপথে যেন এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে সেটি আছড়ে পড়ে এই নীরব ভূমিতে। এই আশ্চর্য্য ঘটনার পর আমেরিকার আধিকারিকরা রকেটের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহের জন্য মেক্সিকোর কাছে আবেদন জানায়। সেই আবেদনে সহজে অনুমতিও মিলে যায়। কিন্তু আমেরিকার আধিকারিকরা যখন সেখানে পৌঁছন তখন আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। সিগন্যাল না পাওয়ায় তাদেরও পড়তে হয় একই সমস্যায়।

কিছু তাত্ত্বিকরা দাবী করেন এই অঞ্চলের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র খুব বেশি মাত্রায় সক্রিয় যা আমাদের আধুনিক সিগন্যালের জন্য এক ‘ডার্ক জোন’-এর সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে এই ঘটনাগুলির কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা এই ঘটনার পিছনে সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হিসাবে একটি বিষয়কে তুলে ধরেছেন। সেটি হল এই অঞ্চলের মাটির নিচে ম্যাগনেটাইট, ইউরেনিয়ামের মতো বহু খনিজ রয়েছে যা সিগন্যালের ক্ষেত্রে বাধার কারণ হতে পারে। এছাড়া এই অঞ্চলে প্রায়শই উল্কাপাতের ঘটনা ঘটে। সেই উল্কাপিণ্ডের টুকরোগুলিতে লোহা ও অন্যান্য ধাতু থাকে যা হয়তো সিগন্যালের সমস্যাগুলিকে তীব্রতর করে তোলে।

এখানেই শেষ নয়, এই অঞ্চলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা গল্পকথাও। এই অঞ্চলের আশেপাশে বসবাসকারী অনেক স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় যে সেখানে নাকি মাঝেমধ্যেই দেখা মেলে তিন অদ্ভুত দর্শন মানুষের। এরকম বলার কারণ হল তাদের পোশাক। মরুভূমির তীব্র আবহাওয়াতেও তারা নাকি ব্লেজার পরে থাকেন! এছাড়া এদের দৈহিক গঠনও স্থানীয়দের থেকে খানিকটা আলাদা। এবং তারা স্থানীয় মানুষদের কাছে এসে কেবল জল চায়। জানা যায় ১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে আর্নেস্তো ও জোসেফিনা ডিয়াস এই অঞ্চলে এসেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এখান থেকে কিছু বিশেষ পাথর সংগ্রহ করা। কিন্তু হঠাৎই শুরু হয়ে যায় প্রবল বৃষ্টি। এরপরই ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা। তাদের গাড়ি কিছুদূর এগোতেই চাকা মাটিতে বসে যায়। এদিকে আরও জোড়ে বৃষ্টি পড়তে থাকে, একটা সময় তারা ধরেই নিয়েছিলেন তাদের মৃত্যু নিশ্চিত, ঠিক তখনই ওই দুর্গম পরিবেশে উজ্জ্বল হলুদ রেনকোট পরা দুজন লোকের দেখা মেলে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে চোখের ভুল মনে হলেও সেটি ঘটনা। তারা সামনে আসতেই পরিষ্কার দেখা গেল ওই দুই অজ্ঞাত ব্যাক্তি তাদের গাড়িটি পিছন থেকে ঠেলে এগোতে সাহায্য করছে। গাড়ি একটু এগোতেই যখন আর্নেস্তো নেমে তাদের ধন্যবাদ জানাতে যান তখন দেখেন কেউ নেই। কে ছিলেন তারা? কোথা থেকে কেনই বা এসেছিলেন সাহায্য করতে তা আজও অজানা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version