কলকাতা ব্যুরো: বেহালার পর্ণশ্রীতে জোড়া খুনের কিনার করল পুলিশ। টাকা-পয়সা হাতানোর জন্যই মাসতুতো দিদিকে খুন করেছে দুই ভাই। আর মাকে খুন হতে দেখে ফেলায় ৬ বছরের তমোজিৎ মণ্ডলকেও খুন করা হয়।

পুলিশের দাবি, জেরায় একথা স্বীকার করেছে ধৃতরা। মৃতার দুই মাসতুতো ভাই সন্দীপ দাস ও সঞ্জয় দাসকে রবিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করবেন তদন্তকারীরা অফিসাররা।

জানা গিয়েছে, ধৃত সন্দীপের বাজারে কয়েক লক্ষ টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল। কিছুতেই ধার শোধ করতে পারছিল না। মাসতুতো দিদির বাড়িতে সন্দীপের একাধিক সময় যাতায়াত ছিল। জেরায় গোয়েন্দাদের সে জানায়, সুস্মিতা মণ্ডলের (দিদি) বাড়িতে প্রচুর গয়না ছিল।

তাছাড়াও তাঁর স্বামী তপন মণ্ডলেরও প্রচুর টাকা । সেই গয়না-টাকা হাতাতেই এই খুন বলে দাবি গোয়েন্দাদের ৷ দিনের বেলায় দিদি কখন বাড়িতে একা থাকেন তা জানা ছিল সন্দীপের। এরপরই ভাইয়ের সঙ্গে প্ল্যান করে ঘটনার দিন দুপুর ১২টা নাগাদ সুস্মিতা মণ্ডলের বাড়িতে উপস্থিত হয় সন্দীপ। চেনা মুখ ও আত্মীয় ফলে দরজা খুলে দেয় সুস্মিতা। এরপরেই সুস্মিতা মণ্ডলের গলা কেটে খুন করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার বেহালার পর্ণশ্রীর এক আবাসনে মা-ছেলের গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ছ’ দিনের মাথায় ঘটনার যবনিকাপতন করল লালবাজার। তদন্তে নেমে পুলিশ মহেশতলা থানা এলাকার বাসিন্দা দুই ভাই সন্দীপ ও সঞ্জয় দাসকে গ্রেফতার করে। এদিন লালবাজারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা জানান, এই ঘটনায় মৃতা সুস্মিতা মণ্ডলের মাসতুতো দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম সন্দীপ দাস ও সঞ্জীব দাস। ধৃতদের বাড়ি মহেশতলায়। সন্দীপ দাসকে শনিবার সারারাত ধরে জেরা করা হয় ৷ জেরায় নিজের দোষ স্বীকার করেছে সন্দীপ ৷ এরপরেই তার ভাই সঞ্জয় দাসকেও গ্রেফতার করে লালবাজার।

এছাড়া গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে লালবাজারে ১০০ নম্বরে একটি ফোন আসে। জানানো হয়, মা ও ছেলের গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয়েছে। এরপরেই রাতে ঘটনাস্থলে হাজির হন লালবাজারের গোয়েন্দারা। পরের দিন গোটা ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করে লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগ।

পুলিশ সূত্রে আরও খবর, তদন্তে নেমে পুলিশ মৃতার নিকট আত্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ৷ জানা গিয়েছে, সঞ্জয় ও সন্দীপ খুনের ঘটনা জানাজানি হতে রাতে বাকি আত্মীদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল ৷ এমনকি বোনের মৃত্যুর শোকপ্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছিল তাদের ৷ তদন্তকারীদের অনুমান নিজেদের সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতেই সেই নাটক করেছিল অভিযুক্ত সঞ্জয় এবং সন্দীপ ৷

পুলিশ সূত্রে খবর, তাদের নিকট আত্মীরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় পর্ণশ্রীর ওই ফ্ল্যাটে কান্নাকাটি করতে দেখা গিয়েছিল ওই দু’জনকে ৷ এর পর রাতের দিকে দু’জনেই হঠাৎ করে সবার চোখের আড়ালে চলে যায় এবং গা ঢাকা দেয় ৷ বিষয়টি আত্মীয়দের থেকে জানতে পেরেই সন্দেহ হয় লালবাজারের গোয়েন্দাদের ৷ সেই মতোই পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং সঞ্জয়ের ধার-দেনার বিষয়টি সামনে আসে ৷ এর পর শনিবার রাতে মহেশতলার বাড়ি থেকে সঞ্জয়কে লালবাজারে নিয়ে আসা হয় জেরার জন্য ৷ সেখানেই সারা রাত এবং আজ সারাদিন জেরার পর দুপুরে অপরাধ স্বীকার করে অভিযুক্ত সঞ্জয় ৷ পাশাপাশি জানায়, তার ভাই সন্দীপও এই অপরাধে যুক্ত রয়েছে ৷

রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে গোয়েন্দাদের তরফে জানানো হয়েছে, সঞ্জয় দাস দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন ৷ দেনার টাকা শোধ করার জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল ৷ সেই অর্থের জোগান দিতে বোন সুস্মিতা মণ্ডলের বাড়িতে লুঠের পরিকল্পনা করে সঞ্জয় এবং তার ভাই সন্দীপ ৷ পুলিশকে সঞ্জয় জানিয়েছে, সঞ্জয় যাকে বিয়ে করেছিল, সেই মহিলার এক ছেলে রয়েছে ৷ তাঁর বিয়েতে প্রচুর খরচ করতে হয় সঞ্জয়কে ৷ আর সেই খরচের জেরেই প্রচুর ঋণ হয়ে গিয়েছিল সঞ্জয় দাসের ৷ টাকা শোধ করতে আত্মীপরিজনদের কাছ থেকে টাকা চেয়েছিল সে কিন্তু, সবাই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল ৷

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version