কলকাতা ব্যুরো: ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডে পুরনির্বাচন। শুক্রবারই এই ভোটের শেষ প্রচার। তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম সকলেই চাইছে নিজেদের সেরাটা দিয়ে শেষবেলার প্রচারে ঝড় তুলতে।

শুক্রবার প্রচারের শেষ দিনে সকাল থেকেই ময়দানে শাসকদলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা। অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও সকাল থেকেই প্রচার করছেন দলের প্রার্থীদের সমর্থনে।

তবে শুক্রবার সকাল সকাল নিজের ওয়ার্ডেই প্রচার সারলেন তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস কুমার। একদিকে রাসবিহারী কেন্দ্রের বিধায়ক, অন্যদিকে ত্রিধারা সম্মিলনী ক্লাবের পুজোর কর্মকর্তা। কলকাতা পুরসভার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেবাশীষ কুমার যাকে এক কথায় সবাই দেবা দা বলেই চেনেন। এদিন লোহাপট্টি থেকে শুরু হয়ে পুরো ওয়ার্ড প্রদক্ষিণ করে তাঁর রোড শো। প্রচারে বেরিয়ে তিনি বলেন, “আমি পরিচিত মুখ হলেও আজকে এসেছি, কারণ এতেই মানুষ বুঝবেন যে জয় নিশ্চিত হলেও আমি ওঁদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।”

পাশাপাশি কলকাতা পুরভোটের শেষ দিন রংচঙে ট্যাবলোয় প্রচার চালালেন তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। এদিন মালা রায়ের সমর্থনে জড়ো হন এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। ট্যাবলোর গায়ে জডানো বেলুন। রাস্তায় নেমে তাঁর হয়ে প্রচার চালালেন মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। চললো প্রার্থীর নামে স্লোগান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তিনজন তারকা বিধায়ক। সোহম চক্রবর্তী, জুন মালিয়া এবং লাভলি মৈত্র আজ তাঁর সমর্থনে প্রচার চালান। মালা রায় বলেন, খুব ভালো প্রচার হয়েছে। আমি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গেছি। মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, বিশ্বাস করেন। এই এলাকার মানুষ তৃণমূল ছাড়া কিছু ভাবেন না।

পুরসভার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচবারের কাউন্সিলার মালা রায়। বিধানসভা ভোটের নিরিখে তাঁর ওয়ার্ডে ৩ হাজার ৮০০ ভোটে এগিয়ে আছে তৃণমূল। এই নিয়ে ষষ্ঠবার পুরভোটে লড়াইয়ে নামছেন তিনি।

এছাড়া ৮১ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জুঁই বিশ্বাস। ভ্রাতৃবধূর সমর্থনে শুক্রবার বিশাল মিছিল করলেন অরূপ বিশ্বাস। সোহম চক্রবর্তীও অংশ নেন এই প্রচারে। এই প্রচার ঘিরে কর্মী সমর্থকদের উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো।

বিকেলে পুরভোটের শেষ দিনের প্রচারে নেমে পড়েন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে বালিগঞ্জ থেকে কালীঘাট পর্যন্ত রোড শো করেন তিনি। রাস্তার দু ধারে জড়ো হয়েছেন বহু মানুষ। সঙ্গে রয়েছেন সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম। মমতার রোড শো তে যেমন ভিড় হয়, আজকের ছবিটাও অনেকটা একই রকম। সেই ছবি থেকে স্পষ্ট কী ভাবে তৃণমূলে অভিষেকের নেতৃত্ব ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

তবে এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে ভোট প্রচার করছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর সিকদারের সমর্থনে প্রচার সারেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। আর ভোট প্রচারে বেরিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র কটাক্ষ করলেন সুকান্ত। প্রশ্ন তুললেন অভিষেকের রাজনৈতিক যোগ্যতা নিয়ে। সুকান্তের দাবি, তৃণমূল ক্ষমতায় না থাকলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুথ সভাপতি হওয়ারও যোগ্য নন।

এছাড়াও সুকান্ত মজুমদারের আরও অভিযোগ, পুরসভা নির্বাচনের জন্য বহিরাগত লোকদের কলকাতায় আনছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাল্টা জবাব দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। সুকান্ত প্রচার করতে করতেই এদিন বলেন, কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের জন্য বহিরাগতদের নিয়ে আসা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে কলকাতায় বাইরের লোক ঢোকানো হয়েছে। ডানকুনি থেকে প্রচুর লোক এখানে আনা হয়েছে।

বিজেপির এই অভিযোগ হজম করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। এই বিষয়ে ফিরহাদ হাকিম পাল্টা বলেন, ‘এখানে বহিরাগতদের আনার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। আমার সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন তারাও প্রত্যেকে চেতলার মানুষ। সুকান্তবাবুরা অনেক কিছুই বলবেন। কারণ ওদের জনভিত্তি নেই। তাই এইসব অভিযোগের কোনও প্রভাব পড়বে না। গোটা বাংলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে।

অন্যদিকে সকাল থেকেই প্রচারের ময়দানে কংগ্রেস প্রার্থীরা। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে জোর প্রচার করেন প্রার্থী সন্তোষ পাঠক। জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত তিনি। এই ওয়ার্ডে তিনবারের কাউন্সিলর তিনি। সন্তোষ পাঠক বলেন, লড়াই কিছু নেই। মেয়র ইন কাউন্সিল, কাউন্সিলরকে হারিয়েছি আগে। এখন অন্য জায়গা থেকে লোক এনে দিয়েছে। এখানে কোনও লড়াই হওয়ারই নেই।

এছাড়া শুক্রবার সকালে ১০১, ১০২ ও ১১০ এই তিন ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থীদের নিয়ে গড়িয়া এলাকায় প্রচার করলেন সুজন চক্রবর্তী। রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক রোডে পদযাত্রা করে চলে প্রচার। পাশাপাশি টালিগঞ্জের নেতাজি নগরে ৯৮ নং ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিএম প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর সমর্থনে এক মিছিলে পা মেলান অভিনেতা বাদশা মৈত্র। 

প্রসঙ্গত, শুক্রবারই কলকাতা পুরসভা ভোটে উত্তেজনাপ্রবণ বুথের তালিকা প্রকাশ করলো নির্বাচন কমিশন। ১৬টি বরোর ১,১৩৯ টি বুথ উত্তেজনাপ্রবণ বলে জানানো হয়েছে। এই ১,১৩৯টি বুথের মধ্যে ৭৮৬টি স্পর্শকাতর ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ১৬টি বরোয় ৪ হাজার ৯৫৯টি বুথ রয়েছে। বহিরাগতদের বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version