সীমান্তের একদিকে পাকিস্তান ও অন্যদিকে চীনের আগ্রাসন বেড়ে চলেছে দিন প্রতিদিন। যে কোনো সময়েই ১৯৭১ এর মতো ভারত-পাক বা ১৯৬২ এর ভারত-চীনের যুদ্ধের পরিস্থিতি হতে পারে। আবার দুই দেশ মিলিত ভাবে আক্রমণ করতে পারে ভারতের উপর। এই দ্বিপাক্ষিক আগ্রাসনকে ভারতীয় সেনা আটকাতে সক্ষম, তার প্রমাণও দিয়েছে বার বার। তবে এইবার কেবল শত্রুকে রুখতেই নয়, যে কোনো সময় যুদ্ধের জন্যও নিজেকে প্রস্তুত করছে সেনা। ১৫ দিনের আগাম নোটিশে যুদ্ধে নামতে অস্ত্র মজুত রাখছে প্রতিরক্ষা বিভাগ। সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনি দাবি করেছেন সুরক্ষা বিভাগের উচ্চ আধিকারিকরা।

সম্প্রতি চীনের তরফে ভারতের বেশ কিছু গ্রাম দখলের অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া তিব্বত ও ভারত সাগরে বেজিং যে ভাবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে, তাতে যে কোনো সময়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে আগেই পরামর্শ দেন ভারতে বর্তমান তিন সেনার প্রধান চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত। এর আগে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি হিসাবে ১০ দিনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত ছিল সেনার কাছে। কিন্তু বর্তমানে ১৫ দিনের জন্য চীন ও পাকিস্তানের সাথে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধে সক্ষম ভারতের তিন সুরক্ষা বিভাগ। ১৫ দিনের অস্ত্র মজুতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচও হয় বলে জানায় সুরক্ষা বিভাগের শীর্ষ কর্তারা। সেনার তরফে এমন দাবিতে নাগরিক মহলে দেখা দিয়েছে প্রশ্নের ঝড়।

তাহলে ১৫ দিনের বেশি যুদ্ধ গড়ালে কি হবে?

ভারত-পাক ও চীন সীমানা বিশেষ করে লাদাখ ও সিয়াচেন উচ্চতা পূর্ণ অঞ্চলে ১৫ দিনের বেশি যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই বলে অনুমান দিল্লির। তাছাড়া যুদ্ধ শুরুর প্রথম কয়েক দিনের মধ্যেই তা কত দিন চলতে পারে, তার অনুমান বুঝে জরুরি অবস্থাতে আরো অস্ত্র মজুত করবে ভারত। অথবা যুদ্ধ শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়া, আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশের হস্তক্ষেপ আসবে বলে মত বিশ্ব রাজনীতিবিধদের।

দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধের জন্য কতটা প্রস্তুত ভারত?

২০১৫ সালে ভারতের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (CAG ) এর পার্লামেন্টে প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী দুই পক্ষের যুদ্ধ হলে মাত্র ৪০ দিনের মধ্যেই অস্ত্রাগার খালি হবে ভারতের অর্থাৎ মাত্র ৪০ দিনেরই গোলা বারুদ মজুত আছে তিন সুরক্ষা বিভাগের কাছে। সরকারের নিরপেক্ষ সংস্থা ক্যাগের অডিট এ সামানে আসে এমনি কঠিন কিন্তু বাস্তব সত্য। তাছাড়া যুদ্ধের জন্য জরুরি ক্ষেত্রে অস্ত্র মজুত করতেও সময়ও অধিক খরচ সাপেক্ষ আর দিল্লির সুরক্ষা বাজেট মাত্র ৪ লক্ষ কোটি। এতো কম সুরক্ষা বাজেটে ভারত দুই দেশের আক্রমণ কতটা সামলে উঠতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে নেটিজেনদের মধ্যে। আবার ১৫ দিনের তাত্ক্ষণিকভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া অনেক বড় ব্যাপার বলে মানছেন অনেকে।

তবে চীনের সাথে সীমা বিবাদ বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থি তি সৃষ্টি না করলেও, তিব্বত ও অরুণাচল এলাকায় বেজিং যে ভাবে রেল সড়ক পরিকাঠামো তৈরী করছে, তাতে ভবিষ্যতে যুদ্ধ পরিস্থিতি আসতেই পারে বলে মত সেনার প্রাক্তন কর্মীদের। সে ক্ষেত্রে কেবল ১৫ বা ৪০ দিন নয়, বেশি সময় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে দিল্লিকে। সুরক্ষায় কম বাজেটকে লক্ষ রেখে অস্ত্র কেনার পরিবর্তে ফ্রান্স, আমেরিকা বা রাশিয়ার মতো দেশগুলির সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়ে অতিরিক্ত মেয়াদ এর জন্য যুদ্ধের সরঞ্জাম লিজ নিতে পারে দিল্লি। সম্প্রতি বেকা এগ্রিমেন্ট এ আমেরিকার থেকে দুটি ড্রোন লিসে নিচ্ছে ভারত। ভবিষ্যতে এফ ১৮ সুপার হরনেট যুদ্ধ বিমান ভারত না কিনে, তা বেশি মেয়াদের জন্য ভাড়া নিয়ে আইযেন এস ভিক্রান্তের জুটি হিসাবে লক্ষ করা যেতে পারে বলে মত সমর বিশেষজ্ঞদের।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version