কলকাতা ব্যুরো: আর কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না ভারত। আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি বিমানে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে ভারতীয় কূটনীতিকদের। মঙ্গলবার বিকেলেই বায়ুসেনা বিমানে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে ভারতীয় আধিকারিকদের। সম্প্রতি মাজার-ই-শরিফ-এ আফগান সেনাবাহিনী এবং তালিবান জঙ্গিদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ বেধেছে। আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় দূতাবাসে কর্তব্যরত ছিলেন তাঁরা।
অন্যদিকে সোমবারই মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কুন্দুজ এবং সর-ই-পুল, উত্তর আফগানিস্তানের দু’টি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নেয় তালিবান। বিশেষত, কুন্দুজ হাতছাড়া হয়ে যাওয়াটা আফগান বাহিনীর কাছে সাম্প্রতিক কালে সব চেয়ে বড় ধাক্কা। তবে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারে কম্যান্ডো বাহিনী পাল্টা অভিযান চালাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৮টি প্রদেশে আফগান বাহিনীর প্রত্যাঘাতে ৫৭২ জন তালিবান জঙ্গি নিহত এবং ৩০৯ জন আহত হয়েছে বলে সরকারের দাবি।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই মাজার-ই-শরিফ থেকে একটি বিমান দিল্লি ফেরে। এলাকায় বসবাসকারী সব ভারতীয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা দ্বিধা না করে ফিরে আসেন। মাজার-ই-শরিফের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সব ভারতীয়ের উদ্দেশে এই বার্তা দিয়েছেন। যে সব ভারতীয় আফগানিস্তান ছাড়তে ইচ্ছুক, তাঁদের বলা হয়েছে যাতে তাঁরা পুরো নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ যেন দ্রুত হোয়াটসঅ্যাপ করেন। দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া হয়েছে- ০৭৮৫৮৯১৩০৩ ও ০৭৮৫৮৯১৩০১।
আফগানিস্তানে কাবুল দূতাবাস ছাড়াও মোট চারটি কনস্যুলেট রয়েছে ভারতের। ভারতীয় সেনা আধিকারিকেরাও সেখানে আফগান সেনা ও পুলিশকে ট্রেনিং দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন। সব আধিকারিককে ফিরিয়ে আনা হবে কি না, তা এখনও জানা যায়নি। তবে সরিয়ে আনার কাজ দ্রুত শুরু হবে বলে সূত্রের খবর। জালালাবাদ ও হায়রাত শহরে কনস্যুলেটের কাজ আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বার বন্ধ করে দেওয়া হল মাজার-ই-শরিফের কনস্যুলেটের কাজ। বাকি থাকল শুধু কান্দাহার।
গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সম্পূর্ণ সরিয়ে নেওয়া হবে। এরপর থেকেই তালিবানি দখলে থাকা এলাকা সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছে। সরকারের দখল থেকে একে একে এলাকা চলে যাচ্ছে তালিবানের হাতে। এমনকি আফগান আধিকারিকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁরা সরকারের শাসনে থাকা এলাকায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন প্রদেশ দখল করতে শুরু করেছে তালিবানরা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মহিলা ও শিশুরাও। একটু এদিক ওদিক মনে হলেই যাকে পারছে একেবারে গুলি করে হত্যা করছে তালিবানরা।
তবে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী দ্রুত কাবুল দখলের উদ্দেশ্যে প্রচণ্ড লড়াই শুরু করেছে তালিবানরা। মার্কিন সহায়তায় প্রত্যাঘাত করেছে আফগান সেনাও। গত রবিবারই নিকেশ হয় প্রায় ২০০ তালিবান জেহাদি। আর মঙ্গলবার ফের শতাধিক তালিবান খতম হলো আফগান বায়ুসেনার আক্রমণে। আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফে একাধিক টুইটে সেকথাই জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে করা এক টুইটে মন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় কান্দাহারের বহিরাঞ্চল ও দন্দ, জেরিয়া, তখতাপোল জেলায় ৪৭ জন তালিবানকে খতম করার কথা। সেই সঙ্গে জানানো হয়, ওই হানায় ২৫ জনের আহত হওয়ার কথাও। তার আগে সোমবার সন্ধ্যা ৯টা নাগাদ হেলমন্দে ১০ জন তালিবান নিকেশ হওয়ার বিষয়ে টুইট করা হয়। তাদের মধ্যে ৩ জন আবার সিনিয়র তালিবান কমান্ডার।