জুনিয়র ডাক্তাররা সরকারের কাছে মোট ১০ দফা দাবি নিয়ে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। শনিবার রাত সাড়ে আটটায় সেই সময়সীমা শেষ হয়। এরপরেই মোট ছ’জন চিকিৎসক অনশন শুরু করেন। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে মঞ্চের চারিদিকে সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। অনশনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আন্দোলকারীরা অনশন মঞ্চে কী ঘটছে সেটা সরাসরি দেখতে পাবেন। শনিবার রাত থেকেই মোট ছ’জন অনশনে বসেছেন। যদিও, তাঁদের মধ্যে আরজি করে কোনও জুনিয়র ডাক্তার নেই। এ দিন অনশন মঞ্চ থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, সিবিআইয়ের উপরেও তাঁদের সম্পূর্ণ আস্থা নেই। জুনিয়র ডাক্তারদের এক প্রতিনিধি বলেন, সিবিআইয়ের তদন্তের উপর তাঁদের আস্থা ছিল। তবে, এখন আর সম্পূর্ণ আস্থা নেই। আদালতে যে শুনানি হচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে না, তদন্ত ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে। অনশনের পাশাপাশি তাঁদের আন্দোলন চলতে থাকবে বলেও জানান জুনিয়র ডাক্তাররা।

প্রশ্ন অনশন করলে ডিউটি কারা করবে? সে প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, যারা অনশন করবেন তাদেরকে কেউ ডিউটিতে যেতে বলতে পারেনা। তারা ছাড়া বাকি যে জুনিয়র ডাক্তাররা সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে পাশে থাকবেন তাঁরা রোটেশন হিসেবে ডিউটি করবেন। বৃহত্তর জুনিয়র ডাক্তার সমাজ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। আমরণ অনশনে বসলে শরীর খারাপ হলে সে দায় হবে সরকারেরই, একথা সরাসরি জানিয়ে দেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা বলেন, যারা অনশনে বসছেন, তারা প্রত্যেকেই জানেন যে তারা ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তারা প্রত্যেকে নিজের ব্যাপারে পুরোপুরি কনফিডেন্ট। এরপরেও কারোর যদি শরীর খারাপ হয়, তার দায় অবশ্যই রাজ্য সরকারের। তবে অনশনে বসছেন যারা তাঁদের কেউ আরজি কর হাসপাতালের ছাত্র নয়। তাঁদের আরও বক্তব্য, তাঁরা নিজেদের দাবিগুলোর ব্যাপারে কতটা দায়বদ্ধ সেটা তাঁরা অনশন করে মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারবেন বলেই আশা রাখেন। অনশনে বসেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুস্টুপ মুখোপাধ্যায়, তনয়া ও স্নিগ্ধা হাজরা, এসএসকেএম-এর অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কেপিসি মেডিক্যালের সায়ন্তনি এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের কুলস্থ আচার্য।

উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। প্রায় দু’মাস ধরে আন্দোলনে শামিল জুনিয়র ডাক্তাররা। একাধিক টালবাহানার পর মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। ঘটনার ৪১ দিনের মাথায় প্রথম দফায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে আংশিকভাবে কাজে ফেরেন। ইতিমধ্যে গত মাসের শেষে ফের সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানি হয়। সেই রাতেই জিবি মিটিং করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেখানে দ্বিতীয় দফায় কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। এর পর শুক্রবার এসএসকেএম থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল এবং ডোরিনা ক্রসিংয়ে ধরনায় বসেন। কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কাজে ফিরেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে দাবি পুরণে রাজ্য সরকারকে ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়। শনিবার রাত সাড়ে আটটার মধ্যে স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ-সহ ১০ দফা দাবিপূরণ না হওয়ায় আমরণ অনশনে বসলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।

অন্যদিকে, আর জি করের প্ল্যাটিনাম জুবিলি ভবনে শনিবার দুপুর থেকে বসেছিল কাউন্সিলের বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কর্তৃপক্ষ, ডাক্তার এবং ইন্টার্নদের প্রতিনিধিরাও। সেখানে দীর্ঘ বৈঠকের পর ১০ জন চিকিৎসককে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই ১০ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাগিং-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আর জি কর হাসপাতালে ‘হুমকি সংস্কৃতি’-তে অভিযুক্ত ৫৯ জনের শাস্তির দাবি তুলেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেওই এই পদক্ষেপ। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের হস্টেল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, শনিবার থেকেই বায়ো টয়লেট বসানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ তাতে অনুমতি দিচ্ছে না। রবিবার সকালে তাঁরা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়, বায়ো টয়লেটের জন্য তাঁরা পুলিশকে ইমেলও করেছিলেন। তাঁদের সে সব আনতে দেওয়া হচ্ছে না। বলা হয়েছে, ওদের বড়বাবু আসার আগে বায়ো টয়লেট নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তিনি ১১টার পর আসবেন। প্রশ্ন, চিকিৎসার সময় কি তাঁরা বলেন, বড়রা কেউ না এলে তাঁরা পরিষেবা দেবেন না? অতএব বোঝাই যাচ্ছে এটা অমানবিক, নিন্দনীয়, ঘৃণ্য।  

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version