কলকাতা ব্যুরো: রাজ্য-রাজ্যপাল বিরোধের জের, আইনি জটিলতায় হাওড়া পুরভোট নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হল। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কলকাতা হাইকোর্টে যে হলফনামা দিয়েছে, তাতে হাওড়ায় পুরভোটের দিন হিসেবে ২২ জানুয়ারি উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু, রাজ্য সরকার হাওড়ায় পুরভোট নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট না-করায়, সোমবার কলকাতার যমজ শহরকে বাদ দিয়েই বাকি চার পুরনিগমের ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে হল।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে শিলিগুড়ি, আসানসোল, চন্দননগর ও বিধাননগর পুরনিগমের ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেন। সেসময় সাংবাদিকরা হাওড়া পুরভোট নিয়ে সৌরভ দাসকে প্রশ্ন করলে, উনি জানান, হাওড়ায় পুরভোট নিয়ে সরকার অবস্থান স্পষ্ট করেনি। সরকারি সিদ্ধান্ত জানতে না-পরায়, হাওড়াকে বাদ দিতে হয়েছে।

এ বিষয়ে সৌরভ দাস বলেন, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেই পুরভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যার অর্থ, হাওড়ায় পুরভোট আপাতত অনিশ্চিত। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হাইকোর্টে জানিয়েছিলেন, হাওড়া পুরসভা সংক্রান্ত সংশোধনী বিলে সই করে দিয়েছেন রাজ্যপাল। যদিও রাজ্যপাল এজি-র দাবি খারিজ করে বলেন, তিনি এই বিলে সই করেননি। ফলে হাওড়া থেকে বালি পুরসভাকে আলাদা করা নিয়ে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়। তার জেরেই হাওড়ায় পুরভোট করানো যাচ্ছে না। এর আগে কলকাতার সঙ্গেই হাওড়ায় পুরভোট হওয়ার কথা ছিল।

এজি আদালতে কী বলেছেন, এ নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে যান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। সৌরভ দাসের কথায়, এজি কী জানিয়েছেন, এটা আমার পক্ষে জানার কথা নয়। আমার কাছে হাওড়ার পুরভোট নিয়ে রাজ্যের তরফে কিছু জানানো হয়নি। তাই নির্ঘণ্ট প্রকাশ করতে পারেনি কমিশন।

এবার পুরভোটের আগে হাওড়া থেকে বালি পুরসভাকে পৃথক করতে বিধানসভায় বিল পাশ করায় রাজ্য। কিন্তু, অভিযোগ, দিনের পর দিন সেই বিল ফেলে রেখেছেন রাজ্যপাল। তিনি সই না-করায়, বিল আইনে পরিণত করা যায়নি। যার জেরে হাওড়ায় পুরভোট ঝুলে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য-রাজপাল বিরোধ চলছে। রাজ্যপালের বক্তব্য, যে সমস্ত নথি চাওয়া হয়েছিল, তা তাঁকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু, রাজ্যের তরফে জগদীপ ধনখড়ের অভিযোগ খারিজ করে বলা হয়, ওনাকে যাবতীয় নথি দেওয়া হয়েছে।

এই বিরোধের জল গড়িয়েছে দিল্লি পর্যন্ত। রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে নালিশ করে চিঠি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে। রাজ্যপাল বিল আটকে রাখছেন, সরকারি কাজে অসহযোগিতা করেছেন, বিধানসভার অধ্যক্ষের কাজে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করছেন, এমন একগুচ্ছ অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। হাওড়ায় পুরভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত এখন চরমে। এই অবস্থায় হাওড়ায় পুরভোট করাতে রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয়, এখন সেটাই দেখার।                               

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version