কলকাতা ব্যুরো: বিমল দাজুর হঠাৎ উদয় পাহাড়ে নতুন আলোচনার সব রকম রসদ দিয়েছে গত ২৪ ঘন্টায়। যেভাবে এতদিন পর বিমল কলকাতায় প্রেস কনফারেন্স করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন জানিয়েছেন, তাতে আগামীতে পাহাড়ে রাজনৈতিক সমীকরণ কি হবে তা নিয়ে এখন থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছে।
গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে এখনো পাহাড়বাসীর একটা বড় অংশই মনে করেন বিমল গুরুং যোগ্য নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পাহাড়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে তার ভূমিকা যথেষ্ট আন্তরিক ছিল বলে মনে করেন বহু সাধারণ পাহাড়িইয়া। সে ক্ষেত্রে ২০১৭ র জুন মাসের মুখ্যমন্ত্রীর ক্যাবিনেট বৈঠক থেকে শুরু করে পরের ঘটনাক্রমে বিমল গুরুং হঠাৎই সরকারের কাছে ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান। যদিও পাহাড়ের বাসিন্দাদের একাংশ মনে করেন, বিমল দাজু গোর্খাল্যান্ডের দাবি সত্যিই কার্যকর করার জন্যই চেষ্টা করায়, তাকে ভিলেন বানানো হয়েছিল।
আর বিমলের অন্তর্ধান এর পরেই বিনয় তামাং যেভাবে তৃণমূলের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন, তাতে তার বিরুদ্ধে বিভীষণ অভিযোগ তুলেছে বহু মানুষ। যদিও বিমল ফেরার হাওয়ার পরবর্তী পাহাড়ের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকা, নতুন করে কোনো অশান্তি না হওয়াটা বিনয় তামাংদের গোষ্ঠীর পক্ষে গিয়েছে। কিন্তু বিনয় জনপ্রিয়তায় বিমলের নখের যোগ্য হতে পারেননি ফাঁকা মাঠ পেয়েও। শাসকের হাত মাথায় থাকা সত্ত্বেও জনপ্রিয় তা না থাকায় ভোটেই তার জবাব পেয়েছেন বিনয়।

আবার এই অবস্থায় বিমল সহ দলের প্রথম সারির নেতারা আড়ালে চলে যাওয়ায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার শক্তি পাহাড়ে অনেকটাই কমেছে, আর একই সঙ্গে শক্তি বেড়েছে জি এন এল এফের। দার্জিলিঙে আগেও এই দলটির যথেষ্ট প্রভাব ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেই শক্তি আরো বাড়িয়ে ফেলে তারা। মূলত জি এন এল এফ এর প্রভাব ও বিমলদের ফেরার হয়ে থাকার সুযোগে দার্জিলিং লোকসভা আসন দখল করে বিজেপি। তারপরে বিজেপিও এখানে স্থানীয় দলগুলির সহযোগিতায় প্রভাব বাড়াচ্ছিল।
এখন বিমল গুরুং উদয় হওয়ায় একদিকে যেমন বিনয় তামাংরা প্রমাদ গুনছেন, একইসঙ্গে প্রশ্ন, পাহাড়ে বিধানসভায় ফল কি তাহলে তৃণমূলের পক্ষে যাবে?
যদিও দীর্ঘদিন পাহাড়ে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এক জি এল এফে র নেতার বক্তব্য, তৃণমূল বিমল গুরুংকে রাষ্ট্রবিরোধী বলে দেগে দেওয়ার পর, তাকে পাহাড় ছাড়তে বাধ্য করা হয়। আর সেই সুযোগেই তার দল ভাঙিয়ে বিনয় তামাংকে পাশে নিয়ে নেয় তৃণমূল। সেই হিসেবে যেমন পাহাড়বাসীর একটা অংশ বিনয়কে বিশ্বাসঘাতক বলে বিশ্বাস করেন। এবার ঠিক একইভাবে বিমল গুরুং নিজেকে অবিশ্বাসী হিসেবে প্রমাণ করে দিলেন।
যেভাবে গত তিন বছর ধরে বিজেপির সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ রেখে, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাটালেন, ঠিক তার পরে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির মধ্যেই তার তৃণমূলের সঙ্গ দেওয়া, পাহাড়ের মানুষেরাও ভালোভাবে নেননি। আগামী ভোটেই আরো ভালোভাবে টের পাবে তৃণমূল।

পাহাড়ে আগামী দিনে কী হবে, তা নিয়ে চর্চার শেষ নেই রাজ্য রাজনীতিতে। বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে আবার তৃণমূল জোট বেঁধে, গোর্খাল্যান্ডের দাবির প্রতি সমর্থন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আবার এর ফলে পাহাড়ে নতুন করে হিংসা ছড়াতে পারে বলেও অভিযোগ রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version