কলকাতা ব্যুরো: পুরভোট নিয়ে মামলায় কাটল না ধোঁয়াশা। ১৯ ডিসেম্বর আদৌ ভোট হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেলো। আগামী সোমবার হাইকোর্টে ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে। বুধবার দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয় মামলাকারীর আইনজীবীর তরফে। তবে শুনানি পিছিয়ে গেলেও বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে না এমন কোনও আর্জি জানানো হয়নি। তাই আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন বিজ্ঞপ্তি জারি করতে কোনও সমস্যা নেই। ১৯ ডিসেম্বর ভোট করতে হলে হিসেব মতো বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে আইনি জট বাড়বে কি না, তা নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছেন কমিশনের কর্তারা।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা ও হাওড়া পুরনিগমের ভোট করতে চেয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এরপর ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু জটিলতা তৈরি হয়। বিরোধীদের দাবি, শুধুমাত্র কলকাতা ও হাওড়া পুরনিগমে নয়, একসঙ্গে ভোট করতে হবে রাজ্যের সবকটি পুরসভায়। সেই দাবিতেই মামলা হয়ে হাইকোর্টে।
বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে সব পুরসভার ভোট একসঙ্গে করা নিয়ে বিজেপির সেই জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল। এদিন মামলাকারীর আইনজীবী পিঙ্কি আনন্দ মামলার দ্রুত শুনানির আর্জি জানান। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব জানতে চান, কেন দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হচ্ছে। আইনজীবী জানান, তাঁরা সব পুরসভার একসঙ্গে ভোট চান, তাই দ্রুত শুনানি হওয়া প্রয়োজন। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে সোমবার।
নিয়ম অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তি জারির ২৪ থেকে ৪২ দিনের মধ্যে ভোট করাতে হয়। ফলে সেই সময় হাতে রাখতে চায় কমিশন। তবে এর আগে উচ্চ আদালতে দাঁড়িয়েই আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি জারিতে রাজি নয়। কিন্তু যদি দেখা যায়, ডিসেম্বরে ভোট করানোর সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, বিজ্ঞপ্তি জারিতে দেরি হচ্ছে, তা হলে মামলা চলাকালীনও রাজ্য নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করতেই পারেন। এ বিষয়ে উচ্চ আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।
অন্যদিকে হাওড়া পুরসভা সংশোধনী বিল ২০২১ নিয়ে জটিলতা অব্যাহত। বিধানসভায় বিলটি পাস হলেও তাতে এখনও সিলমোহর দেননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মঙ্গলবার রাজ্য নির্বাচন আধিকারিক সৌরভ দাসকে জগদীপ ধনখড় রাজভবনে ডাকায়, রাজনৈতিক মহলের অনেকেই আশা করেছিলেন তিনি হয়তো হাওড়া পুরসভার বিলটিতে সই করবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি।
রাজ্যপাল এই সংশোধনী বিলে সই করলে সেটি আইনে পরিণত হবে। বিলটি আইনে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত পুরভোট ঘোষণা করা কার্যত সম্ভব নয় কমিশনের পক্ষে। সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে ১৩২ বছরের বালি পুরসভাকে হাওড়া কর্পোরেশন থেকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে হাওড়া পুরসভা সংশোধনী বিল ২০২১ পাস হয়েছে। ওই বিলে বালির ১৬টি ওয়ার্ড হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের পুনর্বিন্যাসের কথা রয়েছে। রাজ্যপাল এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চান সরকারের কাছে। এর পরেই বিধানসভার পক্ষ থেকে হাওড়া পুরসভা সংশোধনী বিলের যাবতীয় তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যপালের কাছে। তা সত্ত্বেও রাজ্যপাল বিলে সই না করায়, হাওড়া পুরভোট করানো নিয়ে সমস্যায় পড়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
অন্যদিকে, পুরভোট নিয়ে সংঘাত শুরু হয়েছে। কমিশনকে ইতিমধ্যেই কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে, রাজ্য সরকারের শাখা হিসেবে কাজ করলে চলবে না, তাদের কথা মতো চললেও হবে না, এমন বার্তাই দিয়েছেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবার রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস।
রাজ্যপালের সেক্ষেত্রে প্রশ্ন, কেবল কলকাতা ও হাওড়াতেই কেন পুরভোট? বাকি পুরসভাগুলিতে কেন ভোট হবে না? সব পুরসভাগুলিতেই একই সঙ্গে ভোট করানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল। তারপরই দুটো টুইট করেন। দ্বিতীয় টুইটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, পুরভোটের ক্ষেত্রে তাঁর কী কী কর্তব্য। বৈঠকের পর একটি চিঠি কমিশনকে পাঠানো হয় রাজ্যপালের তরফে।