কলকাতা ব্যুরো: (প্রতীকী ছবি) গণধর্ষিতা এক তরু নীর মৃত্যুর ঘটনার পর বেওয়ারিশ লাশের মতো তার দেহ পুড়িয়ে দিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ ছিল। এবার উত্তর প্রদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় দলিত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দুটি সংগঠনের নেতাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠলো। এরমধ্যে ভিম আর্মি সংগঠনের প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদকে তার সাহারানপুরের বাড়িতে হাউস অ্যারেস্ট করে রাখার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

আবার অন্যদিকে তারই সঙ্গে এই পরিবারটির পাশে দাড়িয়ে সু বিচারের দাবীতে আন্দোলন করা আজাদ সমাজ পার্টির দিল্লি শাখার প্রধান হিমাংশু বাল্মিকীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পরে চন্দ্রশেখর আজাদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলেও, মঙ্গলবার রাতের পর থেকে হিমাংশ বাল্মীকির কোন খোঁজ নেই বলে অভিযোগ।

দিল্লির সফদর জং হাসপাতাল থেকে দেহ নিয়ে হাথ্রাসে এই পরিবারটির গ্রামে ফেরার সময় এই দুজনকে পুলিশ ভিড়ের মধ্য থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরপরে চন্দ্রশেখর আজাদকে তার বাড়িতে হাউস অ্যারেস্ট রাখলেও, বাল্মিকী ব্যাপারে এখনো কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি।

এদের অপরাধ কি?

এই দুজনে হাত রাসেল ওই পরিবারটির হয়ে সৰদরজং হাসপাতালের সামনে গলা ফাটিয়ে ছিলেন সমর্থকদের নিয়ে। একই সঙ্গে মৃতদেহ নিয়ে এরা ওই গ্রামে ফিরছিলেন। কিন্তু মাঝ রাস্তা থেকে এদের দুজনকে ভিড় থেকে সরিয়ে নেয় পুলিশ। আজাদ এ ব্যাপারে হিন্দিতে টুইট করে লিখেছেন, সারা পৃথিবী দেখল আমাদের বোন একটা বেওয়ারিশ লাশের মত তার পরিবারের অনুমতি ছাড়াই সরকারের পুলিশ তাকে পুড়িয়ে দিল। মানুষের নীতিবোধ শেষ হয়ে গেছে। আমাকে আটক করে রাখা হয়েছে বাড়ির মধ্যে। সাহারানপুরের বাড়িতে আমি বন্দি। কিন্তু আমাদের লড়াই চলবে। আজাদ একটি ছবিও তার টুইটার সঙ্গে জুড়েছেন। যেখানে একটি নোটিশ সাহারানপুর পুলিশ ইস্যু করেছে। তাতে বলা হয়েছে, আপনাকে জানানো হচ্ছে সিআরপিসি ১৪৪ ধারা জেলায় লাগু করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে খবর আছে, আপনার ঘোরাঘুরি এবং কাজকর্ম ও তাতে ভিড় বাড়ছে। এর জন্য আইন শৃংখলার সমস্যা হতে পারে। কোনরকম অঘটন ঘটতে পারে। তাই আপনাকে বাড়িতে থাকার কথা বলা হচ্ছে।

সাহারানপুরের ফতেপুর থানার পুলিশের জারি করা এই নোটিশ প্রসঙ্গে সংবাদসংস্থা ওই থানার ইনচার্জ মনোজ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি দাবি করেন, আজাদকে হাউস অ্যারেস্ট করা হয়নি, তাকে বাড়িতে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে আইন-শৃংখলার কথা ভেবে। এমনকি এই নির্দেশের কোন সময়সীমাও পুলিশ দেয়নি, যে কতদিন তাকে এভাবে বাড়িতে থাকতে হবে।

প্রথমে আজাদের ও বাল্মীকির কোন খবর ছিল না। সে সময় তাঁর সংগঠনের নেতারা খোঁজখবর শুরু করেন। তাদের বক্তব্য, দেহ নিয়ে যখন আলিগড়ের জহর টোল প্লাজায় এলাকায় তারা পৌঁছেছেন, তারপরেই তাকে ও বাল্মিকী কে পুলিশ ভিড়ের থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। তাদের আটক করা হয় মঙ্গল ও বুধবার। পরে আজাদকে তার বাড়ি থেকে পাওয়া গেলেও, এখনো পর্যন্ত বাল্মীকির কোন খবর নেই বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, পরিবারের সম্মতি নিয়েই দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও আলীগড় পুলিশের কর্তারা এখনো বাল্মিকী সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি বলে দাবি ঐ সংগঠনগুলি নেতাদের।

এক দলিত মেয়ের এমন নৃশংস গণধর্ষণ ও মৃত্যুর পরে সারা দেশে উত্তর প্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছে। এরইমধ্যে দুটি দলিত সংগঠনের নেতাদের এইভাবে মুখ বন্ধ করতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া কতটা পুলিশকে আগামীতে স্বস্তি দেবে তা নিয়েও এখন হিসেব কষছেন বর্ষিয়ান পুলিশ অফিসাররা। তাদের মতে, এটা বুমেরাং হতে পারে। কেননা ইতিমধ্যেই বিজেপির তরফ এই ঘটনায় যোগী সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দামন্দ শুরু হয়েছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version