কলকাতা ব্যুরো: সাধারণতন্ত্র দিবসের আগের দিন বিধানসভায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মঙ্গলবার তিনি বিআর আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করার জন্য গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই নতুন করে তরজায় জড়ালেন অধ্যক্ষের সঙ্গে। এদিন বিধানসভা ভবনে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘এখানে অধ্যক্ষ যা খুশি তাই বলেন। উনি মনে করলেন রাজ্যপালকে যখন তখন যা খুশি বলার লাইসেন্স রয়েছে ওনার।’

এরপরই রাজ্যপালকে পাল্টা নিশানা করেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করেন, এত রাজ্যপাল এর আগে বিধানসভায় এসেছেন। কিন্তু জগদীপ ধনখড়ের মতো অসৌজন্য কেউ কোনওদিন দেখাননি। একইসঙ্গে অধ্যক্ষ প্রশ্ন তোলেন, এদিন রাজ্যপাল যা করলেন তা কোনও সাংবিধানিক পদে থাকা মানুষের নাকি কোনও রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে।

অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, উনি ওনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সেইমতো আমরা সমস্ত আয়োজন করে রেখেছিলাম। আমি অবাক হয়ে গেলাম উনি এখানে এসে আম্বেদকরের স্মৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বিধানসভার সমালোচনা শুরু করে দিলেন। এটা অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক আচরণ বলেই আমি মনে করি। বিধানসভা এমন একটা জায়গা যেখানে উনি ওনার এক্তিয়ারে কাজ করবেন। আমি আমার এক্তিয়ারে কাজ করব। যদি ওনার সাংবাদিক সম্মেলনের দরকার হতো, উনি রাজভবনে ডেকে পাঠাতে পারতেন।

এছাড়াও এদিন রাজ্যপাল দাবি করেন, তিনি বিধানসভা থেকে যাওয়া একটি বিলও আটকে রাখেননি। কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। যার জবাব পাননি এখনও অবধি। লোকায়ুক্ত নিয়োগ থেকে হাওড়া পুরনিগম সংক্রান্ত বিল কিংবা লিঞ্চিং বিল সমস্ত প্রসঙ্গই এদিন তুলে একই দাবি করেন ধনখড়। যদিও এ নিয়ে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, প্রত্যেকটা চিঠির প্রতিটা বর্ণ সত্য আমরা লিখেছি। হাওড়া পুরনিগমের বিল পাশ করা হয়নি। লিঞ্চিং বিল উনি বলছেন রাষ্ট্রপতি বাতিল করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে এরকম কোনও তথ্য নেই। অন্যান্য বিল সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনও তথ্য আসেনি। বিধানসভা এমন একটা জায়গা যেখানে সমস্ত তথ্য আসা দরকার। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট দেখছে। আমি জানি না কেন উনি এ কথা এখানে বললেন। তবে এটা খুব পরিষ্কার এই আচরণ কোনও রাজ্যপালের পক্ষে সৌজন্যমূলক বলে আমি মনে করি না।

এদিন রাজ্যপাল অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধ্যক্ষ যখন যা খুশি বলেন। উনি ভাবেন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যা কিছু বলার ওনার লাইসেন্স আছে। আমি অধ্যক্ষকে একাধিকবার বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। তথ্য জানাতে বলেছি। কিন্তু উনি সে জবাব দেননি। এভাবে একজন অধ্যক্ষ কখনওই রাজ্যপালকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। এটা সংবিধানবিরোধী। উনি যে ভাষায় রাজভবনকে লেখেন তা লজ্জার।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা তোপ, পশ্চিমবঙ্গে উনি একমাত্র রাজ্যপাল নন। এর আগে আরও অনেক রাজ্যপাল এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে আমরা অনেকেই কাজ করেছি। সেখানে কোনওদিন বিরোধ হয়নি। এই ধরনের মন্তব্য কোনও রাজ্যপাল করেননি। বিধানসভার সঙ্গে রাজভবনের সুসম্পর্কও অক্ষুন্ন থেকেছে। আমি বুঝতে পারছি না উনি কী চাইছেন। উনি কার মুখপাত্র হয়ে কথা বলছেন সেটাও বোঝা গেল না।

তবে এদিন এই সমালোচনার মধ্যেই রাজ্যপালের পাশে দাঁড়ালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন রাজ্যপাল কোনও রকমের ‘সংবিধান বিরোধী’ মন্তব্য করেননি। তিনি যা বলেছেন ঠিকই বলেছেন। শুভেন্দু বলেন, জাতীয় ভোটার দিবসে রাজ্যপালের ভোট পরবর্তী হিংসার উল্লেখ যথোপযুক্ত। পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃত ভোটারদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তরীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থায় যারা শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ হিন্দু ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও ঘর ছাড়া রয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যে। তাদের কথা বলতে গিয়ে রাজ্যপাল ভোট-পরবর্তী হিংসার কথা বলেছেন।

অন্যদিকে, সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী রাজ্যপালের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। তাঁদের মতে, অধ্যক্ষকে ছোট করার চেষ্টা গণতন্ত্রের পক্ষে নজিরবিহীন এবং তা খারাপ। অধীর চৌধুরী বলেছেন রাজ্যপালকে আরও সংযম রাখা উচিত।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version