কলকাতা ব্যুরো: শুক্রবার মকরসংক্রান্তি। মকর সংক্রান্তির মাহেন্দ্রক্ষণে‌র আগে থেকেই সাগরে পূণ্যস্নান করতে ভিড় জমিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে এই বছর বিধিনিষেধ মেনে শর্তসাপেক্ষে মেলা করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে করোনার চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে চলছে গঙ্গাসাগর মেলা। শীতকে সঙ্গী করে শুক্রবার, মকর সংক্রান্তিতে সাগরের জলে পুণ্যস্নান সারছেন পুন্যার্থীরা। পাশাপাশি চলছে কপিলমুনি মন্দিরের পুজো।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুণ্যার্থীদের স্নানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমুদ্রতীরে তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ই- স্নানের কাউন্টার। এই কাউন্টার থেকেই পুণ্যার্থীরা পবিত্র গঙ্গা জল নিয়ে বিশ্বাসের সঙ্গে পুণ্যস্নান করতে পারবেন। পাশাপাশি গঙ্গাসাগরের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে ড্রোনের মাধ্যমে কড়া নজরদারি।

সংক্রমণ রুখতে এই বছর গঙ্গাসাগর মেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাস্ক, জোড়া ডোজ ভ্যাকসিনের রিপোর্ট, RT-PCR নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া গঙ্গাসাগরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। একত্রে ৫০ জনের বেশি পুণ্যার্থীদের সমুদ্র সৈকতে জমায়েত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এই নিয়মগুলি খুব ভালোভাবে মেনে চলা হচ্ছে। তার জন্য নজরদারিও চলছে।

গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের জন্য সমুদ্রতীরে রাখা হয়েছে অত্যাধুনিক ড্রোন। এই অত্যাধুনিক ড্রোনগুলিতে প্রায় ১৫ লিটার গঙ্গা জল নিয়ে উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সকল পুণ্যার্থীরা ড্রোনের মাধ্যমে স্নান করতে ইচ্ছুক, তাঁদেরকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানোর পর অত্যাধুনিক ড্রোন দিয়ে স্নান করানো হচ্ছে।

সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল জানান, করোনা সংক্রমণ এড়াতে গঙ্গাসাগর মেলার জন্য একাধিক নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতবছর ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল ই-স্নান। তার জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে এই বছর করোনা পরিস্থিতিতে নেওয়া হয়েছে নতুন পদক্ষেপ ড্রোনের মাধ্যমে পুণ্যার্থীদের স্নান করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কয়েকজন পুণ্যার্থী জানিয়েছেন, এ যেন মা গঙ্গা আকাশ থেকে আমাদের পৃথিবীতে নেমে আসছেন। যেমনভাবে মহাদেবের জটা থেকে মর্ত্যে আগমন হয়েছিল মা গঙ্গার।

এদিকে গঙ্গাসাগরে যাতায়াত ব্যবস্থার দিকেও বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। এক টিকিটেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে তীর্থস্থানে। তবে শুধু যাওয়া নয়, ফেরাও। করোনা পরিস্থিতিতে ভিড় এড়াতে সাগরে যাওয়ার এক টিকিট ব্যবস্থায় খুশি পুণ্যার্থীরা। অতীতে গঙ্গাসাগর যেতে পুণ্যার্থীদের বাসে, ভেসেলে আবার বাসে ওঠার জন্য আলাদা আলাদা করে টিকিট কাটতে হতো। কিন্তু এবারই প্রথম বারবার বাস বা ভেসেলের আলাদা করে টিকিট কাটতে যাত্রীদের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। হাওড়া থেকে ২১০ টাকা, আর বাবুঘাট থেকে ২০০ টাকা দিয়ে একবার টিকিট কাটলেই ঘুরে আসা যাচ্ছে গঙ্গাসাগর।

পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, বাবুঘাট বা হাওড়া থেকে প্রথমে লট এইট, সেখান থেকে ভেসেলে করে কচুবেড়িয়া সেখান থেকে আবার বাসে করে গঙ্গাসাগর। তবে শেষবার যাত্রীকে যেতে হচ্ছে বেসরকারি বাসে চড়ে। যার খরচটা তাঁদের আলাদা করেই বহন করতে হচ্ছে। আবার একই কায়দায় ফেরাও। আর নতুন করে কোন টিকিট কাটার দরকার হবে না পুণ্যার্থীদের। যাওয়ার টিকিট দেখিয়েই বাস এবং ভেসেলে চড়ে কলকাতায় ফিরে আসতে পারবেন তাঁরা। টিকিট কাটার সময় যাত্রীদের ডাবল ডোজ ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট দেখা হচ্ছে। ভ্যাকসিন দেওয়া না থাকলে কোনওভাবেই টিকিট দেওয়া হচ্ছে না বলেই জানানো হয়েছে পরিবহন দপ্তরের তরফে।

কিন্তু পূণ্যস্নান করতে গিয়ে কিছুকিছু জায়গায় কোভিডবিধি কার্যত শিকেয় তুলেছেন পূণ্যার্থীরা। এর মধ্যে শুক্রবারও আর এক প্রৌঢ়াকে চিকিৎসার জন্য আকাশ পথে উড়িয়ে আনা হয়েছে। ৭৫ বছর বয়সি সাবিত্রী সালিকরাম বাওয়ানে নামে এই মহিলা মধ্যপ্রদেশ থেকে গঙ্গাসাগরে এসেছিলেন। তাঁর ঘাড় ভেঙে যাওয়ায় তাঁকে আকাশ পথে উড়িয়ে আনা হয়েছে। তবে তাঁর কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

দেশে তথা রাজ্য জুড়ে হু-হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। মেলায় প্রবেশের আগে করোনাবিধির যে কড়াকড়ি লক্ষ করা যাচ্ছিল, তা স্নানের সময় দেখা যায়নি। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ববিধিও। করোনা বিধির তোয়াক্কা না করেই এক সঙ্গে বহু মানুষের ভিড়ে সংক্রমণ কতটা ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

পাশাপাশি শুক্রবার সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে সাগর উপকূলে। তবুও মানুষের উৎসাহে খামতি দেখা যায়নি। কপিল মুনির মন্দির চত্বরেও পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল। এ দিকে করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রোজই মেলায় ঘুরে ঘুরে নজরদারি চালাচ্ছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ প্রতিনিধি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় ও রাজু মুখোপাধ্যায়।

তবে এদিন বেশিরভাগ পুণ্যার্থীদের দেখা গিয়েছে কোভিড বিধি মেনে মকরস্নানে অংশ নিতে। যদিও পর্যবেক্ষকরা বলছেন গঙ্গাসাগর বিতর্ক হয়তো এখনই থামবে না। মকর সংক্রান্তির পর রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি কি হয় এখন সেদিকেই নজর রাজনীতির কারবারি থেকে শুরু করে সাধারণ জনতার।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version