তৃষা পাল

মাত্র ঘন্টা চারেক এ শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক পৌঁছতে চান? অথবা চিনের সঙ্গে সম্পর্ক আরেকটু বন্ধুত্বপূর্ণ হলে, দেখতে যেতে চান নাথুলা বর্ডার? আর দীর্ঘ ছয় সাত ঘন্টা গাড়িতে ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে গ্যাংটক পৌছনোর বিভীষিকা নয়, একেবারে ট্রেনে চেপে ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই পৌঁছানো যাবে সিকিমের রাজধানীতে। সবুজে ঢাকা বনাঞ্চলকে কোন ভাবে বিঘ্নিত না করেই দীর্ঘ টানেল এর মধ্য দিয়ে সিকিমের রংপো পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার জন্য নতুন রেলপথ তৈরি হচ্ছে নর্থ ফ্রন্টায়ার রেলের উদ্যোগে। দীর্ঘদিন আইনি জটিলতায় ও জমি জটে আটকে থাকার পর এই প্রকল্প নিয়ে আবার উদ্যোগী হয়েছে রেল। কাজ শেষ হয়ে গেলে একদিকে পর্যটকদের জন্য নতুন পথ খুলে যাবে সিকিম যাওয়ার। পাশাপাশি চিনের সীমান্ত সামরিক বাহিনী পাঠানোর ক্ষেত্রে এই পথ হবে সবচেয়ে বেশি সহজ। একইসঙ্গে এই পথ সিকিমের অর্থনীতিতে একটা বড় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা অর্থনীতিবিদদের।

ভ্রমনপ্রেমী মানুষের কাছে এ যেনো এক স্বপ্নের সন্ধান পাওয়া। আপাতত সেবক থেকে রংপো যাত্রা করা যাবে এবার ট্রেনেই। তিন পর্যায়ে এই কাজ চলছে। রং পো থেকে কাজ শুরু হলেই প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে পৌঁছবে গ্যাংটক। তার আগে ট্রেনে রং পো পৌঁছে গেলে, শিলিগুড়ি থেকে দীর্ঘ গাড়ির ধকল সামলে গ্যাংটক যাওয়ার ঝক্কি কমে গেলো।

কম খরচে এবার মাত্র দু ‘ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব রংপোতে। এই যাত্রা পথ আর পাঁচটা ট্রেনে জার্নির মতো সাধারনা, এই যাত্রা পথ হবে খুব রোমাঞ্চকর। নর্থ ইস্ট রেলওয়ে কাছে এটা একটা স্বপ্নের প্রজেক্ট যা বাস্তবায়ন সম্ভব হতে চলেছে.। এই প্রজেক্টের যাত্রা পথ যুক্ত রয়েছে সিকিমের সাথে যেটা চিন সীমান্তের সাথে যুক্ত। সেবক থেকে ট্রাসিন উঠে রংপো পৌঁছাতে মোট অতিক্রম করতে হবে চারটি স্টেশন সেবক, রিয়ং, তিস্তা বাজার, রংপো। সব মিলিয়ে ৪৪ কিলোমিটার পথ।

এই যাত্রা পথে অতিক্রম করতে হয় ১৯ টা ব্রিজ, আর ১৫ টা মেজর ব্রিজ এবং ১৪ টি টানেল, ব্রিজ আর টানেল মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য ৩8.৫৫ কিমি, এ এক অন্যরকম জার্নি বলা যেতেই পারে। ব্রিজ অতিক্রম করার পর অতিক্রম করতে হয় টানেল। সর্বোচ্চ টানেল দূরত্ব ৫২৭০ মিটার আর সবথেকে ছোট টানেল দূরত্ব ৫৩৪ মিটার। এইসব অতিক্রম করার পর আসে স্টেশন তিস্তা বাজার।

তিস্তা বাজার থেকে রংপো যাবার পথে অতিক্রম করতে হয় মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি তারপর কার্শিয়াং ফরেস্ট ডিভিশন তারপর দার্জিলিং ফরেস্ট ডিভিশন তারপর কালিংপং ফরেস্ট ডিভিশন অবশেষে আসে ইস্ট সিকিম ফরেস্ট ডিভিশন। এই জার্নি পুরোটাই ওয়াইল্ড লাইফ আর ফরেস্ট ডিভিশনের মধ্যে দিয়ে। এই যাত্রা পথে যুক্ত নানান টুরিস্ট স্পট। এটা শুধু সেবক থেকে রংপো যাত্রাপথ না, এই যাত্রায় দৃশ্যমান অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

এই যাত্রা পথের পরিকল্পনা যে শুধু ভ্রমণ প্রেমী মানুষের জন্য সেটা নয়, এই যাত্রা পথ খুলে গেলে আগামী প্রজন্ম লাভবান হবে বলে মনে করেছে নর্থ নর্থ ফ্রন্টিয়ের রেলওয়ে। শুধু মাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, শিক্ষার সঙ্গেই বাণিজ্য এর থেকে সুফলতা পাবে। ফলে এখন শুধুই প্রতীক্ষা ট্রেনে ঝমঝম করে শিলিগুড়ি থেকে রংপো হয়ে গ্যাংটক পৌঁছে যাওয়ার জন্য।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version