কলকাতা ব্যুরো: গত বিধানসভা ভোটে বাংলায় লেজে গোবরে হলেও লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজ্যে দলের অক্সিজেন যোগাতে চারজন হাফ মন্ত্রী কেন্দ্রে নিয়ে গেল মোদি সরকার। অথচ দু’বছর আগে বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে সংঘমিত্রা চৌধুরীকে কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু এবার তাদের দুজনকে সরিয়ে দিয়ে, সেই জায়গায় মোট চারজনকে দিল্লিতে প্রথম রাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বসিয়েছে বিজেপি সরকার। যে চারজনকে রাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে তার পিছনে অনেক হিসেব নিকেশ আছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। আগামী লোকসভা ভোটে যাতে ১৮ টি আসনের থেকে একটি আসনও না কমে, সেই দিকেই লক্ষ্য রেখে মোদি সরকার এই চারজনকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করল বলে ধারণা বঙ্গ বিজেপির।
যদিও বাংলা থেকে ১৮ টি আসন পাওয়ার পরেও কেন একজনকেও পূর্ণ মন্ত্রী করা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বাংলা বিজেপির। আবার বাবুল সুপ্রিয়র মত হেভিওয়েট তারকাকে মন্ত্রিসভা থেকে বসিয়ে দেওয়ায় ২০২৪ সালে আসানসোল আসন কতটা বিজেপির জন্য নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
এবার উত্তরবঙ্গ থেকে দুজনকে রাষ্ট্রবন্ধী করেছে সরকার। তাদের মধ্যে ডুয়ার্সের জণ বারলাকে সংখ্যালঘু মন্ত্রকের মন্ত্রী করা হয়েছে। প্রসঙ্গত জণ বারলা উত্তরবঙ্গের আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি। ডুয়ার্সে তপশিলি জাতির ভোটারের সংখ্যা যথেষ্ট। আবার এই উত্তরবঙ্গ থেকেই মন্ত্রিসভায় নিয়ে যাওয়া হল নিশিথ প্রামাণিককে। কোচবিহারের এই রাজবংশী জনজাতির প্রতিনিধি সম্পর্কে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তার মধ্যেও তৃণমূল থেকে মুকুল রায়ের সঙ্গে বিজেপিতে আসার পরেও প্রায় একার কারিশমায় লোকসভা ভোটে জয়পান এই তরুণ তুর্কি। এবার বিধানসভা ভোটে তাকে প্রার্থী করেছিল দল। বাবুল সুপ্রিয়র মতো অনেকেই বিধানসভায় হেরে গেলেও নিশীথ প্রামানিক বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। তা ছাড়া মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে যাওয়া নিশিথ প্রামাণিক এর মত ভালো সংগঠক এবং রাজবংশীদের প্রতিনিধিকে কোনমতেই হাতছাড়া করতে চায়নি বিজেপির থিংক ট্যাংক। ফলে তাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হলো বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
দক্ষিণবঙ্গের জেলা গুলির সঙ্গেই উত্তরবঙ্গ এবং ত্রিপুরাতেও যথেষ্টই ভোটে প্রভাব রয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের। বনগা ঠাকুরনগরের মতুয়া সংঘের প্রথম পুরুষের পরিবারকে নিয়ে দীর্ঘদিন তৃণমূল ভোট বাড়িয়েছে। গত লোকসভা ভোটে সেখানে থাবা বসিয়েছে পদ্মফুল। শান্তনু ঠাকুরকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়ে আসলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে বিজেপি। রাজনৈতিক অভিজ্ঞদের মতে, এবার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আশানুরূপ ফল না হওয়া, তাছাড়া মতুয়াদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা কথা ঘোষণা না করা, এনআরসি নিয়ে স্পষ্ট বার্তা না দেওয়ার কারণে মতুয়া সমাজ যথেষ্টই অসন্তুষ্ট বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের উপরে। সেই আবহেই বিজেপির পরামর্শদাতারা শান্তনু ঠাকুরকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে গিয়ে মতুয়া ক্ষোভ প্রশমন করতে চাইছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
উত্তরবঙ্গের পরেই গত লোকসভা ভোটে বিজেপিকে বাড়তি নম্বর দিয়েছে জঙ্গলমহল। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর যথেষ্ট বিজেপির পাশে থেকেছে। এবার বিধানসভা ভোটে তুলনায় জঙ্গলমহলের পাঁচ জেলায় খারাপ ফল হলেও, আগামী লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে তাই বাঁকুড়ার নেতা সুভাষ সরকারকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে যাওয়া হল বলে মনে করছেন বিজেপির এ রাজ্যের পরামর্শদাতারা।
যে চারজনকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হয়েছে তাদের একদিকে ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব, অন্যদিকে ধর্ম, সম্প্রদায় ও সামাজিক প্রতিনিধিত্বএ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বহু বিজেপি নেতা। আর
এই অবস্থায় লকেট চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষেদের আপাতত যে মন্ত্রিসভায় ঢোকার ছাড়পত্র আর মিলছে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তাদের ঘনিষ্ঠরা। তাই আপাতত এই চার মন্ত্রীকে নিয়ে বিজেপিকে রাজ্যে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে ভোট টানার চেষ্টা করতে হবে।