কলকাতা ব্যুরো: নন্দীগ্রামে আহত হওয়ার পরে ২৪ ঘন্টা কাটলো না। বদলে গেল বিবৃতি। ২৪ ঘণ্টা আগে তিনি নন্দীগ্রামে গাড়ির মধ্যে বসে কাতরভাবে ইঙ্গিত করেছিলেন, তাকে মারার ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং পিছন থেকে কয়েকজন তাকে ধাক্কা দেওয়ায় তিনি পা, মাথায়, বুকে চোট পেয়েছেন।
তারপর থেকে গোটা রাজ্য জুড়ে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা আন্দোলনের নামে চালিয়ে গিয়েছেন বিশৃঙ্খলা। ট্রেন অবরোধ, রাস্তা অবরোধ করে একেবারে বিরোধীদের কায়দায় দলের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর উপরে হামলার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপিকে কাঠগড়ায় করে তুলেছিলেন।
যদিও এদিন দুপুরে বিজেপির রাজ্য নেতারা হাসপাতালে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। একইসঙ্গে তারাও দাবি তোলেন, এই ঘটনার তদন্ত হোক। কিন্তু এদিন বিকেলে ভোলবদল।


হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে কোথাও চার – পাঁচ জন তাকে ঠেলে ফেলার বা কোন দুরভিসন্ধির ইঙ্গিত নেই। এদিন মূল বক্তব্য, ভিড়ের মধ্যে নন্দীগ্রামে গাড়িতে চাপ পড়ে। আর গাড়ির চাকায় চাপা পড়ে যায় তার পা। এর পরে তিনি দলীয় কর্মী সমর্থকদের সংযত হওয়ার, মানুষের সমস্যা না হয়- তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন, কেন এই ভোলবদল? বর্ষিয়ান পুলিশ অফিসাররা বলছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যিনি জেড প্লাস নিরাপত্তা পান, তার ওপর সত্যিই যদি আক্রমণ হয়ে থাকে, সেটা যথেষ্টই ভয়ের বিষয়। আর এখন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এই অবস্থায় যদি নির্বাচন কমিশন সত্যিই কোন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়, তাহলে তার ফল কি হতে পারে তা আঁচ করেছে রাজ্যের শাসক দল।

নির্বাচন কমিশনকে জেলা পুলিশ রিপোর্ট দেয় – এটি কেবলমাত্র দুর্ঘটনা, কোনও ভাবেই হামলা নয়।

পাশাপাশি বুধবার নন্দীগ্রামে এত মিডিয়ার ক্যামেরার মধ্যে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো অথচ কোন ক্যামেরায় তার ছিটেফোঁটাও ধরা পড়লো না, এ বিষয়টা খুব বেশি মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। পাশাপাশি যে অভিযোগ তৃণমূলের তরফে তোলা হয়েছে, তাতে যদি সত্যিই পুলিশ তদন্ত করে, সে ক্ষেত্রে নন্দীগ্রামের কয়েকজন লোককে গ্রেফতার করতে হতে পারে। যেটা ভোট বাজারে তৃণমূলের ভোটবাক্সে যথেষ্টই উল্টো ফল করতে পারে। এই আশঙ্কাতেই তড়িঘড়ি হামলা বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সরিয়ে রেখে, একেবারে সাদামাটাভাবে ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোছের একটা বিবৃতি দিয়ে আপাতত হুইল চেয়ারে করে হেলিকপ্টারে গিয়ে মঞ্চে বসে বক্তৃতা দেওয়ার রাস্তা তৃণমূল খুলে রাখলো। এই বাজারে এটা একটা আলাদা চমক হতেই পারে। পাশাপাশি যে সহানুভূতির হাওয়া তোলার জন্য হামলার তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছিল, সেই সহানুভূতি, হুইলচেয়ারে বসা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে বাড়তি তৃণমূলকে অক্সিজেন জোগাতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের মত।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version