কলকাতা ব্যুরো: মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন একনাথ শিণ্ডে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই ঘোষণা করলেন দেবেন্দ্র ফড়ণবিস। বালাসাহেব ঠাকরেকে সম্মান জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত, জানাচ্ছেন ফড়ণবিস। জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার সময়ই শপথ নিতে চলেছেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী। 

প্রথম থেকেই তাঁর অভিযোগ ছিল উদ্ধব ঠাকরে হিন্দুত্বের পথ থেকে সরে গিয়েছেন। তিনি বালা সাহেবের আদর্শও মানছেন না। আর বৃহস্পতিবার তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করার পর সেই একনাথ শিণ্ডে বললেন, আগামী দিনে হিন্দুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। বালা সাহেব ঠাকরের আদর্শকে আরও বেশি করে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তিনি সব রকম ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

তবে এখানেই শেষ নয়। দেবেন্দ্র ফড়নবীশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করার পরই শিণ্ডে বলেন, আমি বিজেপি-নরেন্দ্র মোদি-দেবেন্দ্র ফড়নবীশের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। চির কৃতজ্ঞ থাকব। আমার সঙ্গে মাত্র ৫০ জন বিধায়ক। বিজেপির হাতে একশোর বেশি বিধায়ক। কিন্তু, তাও আমার জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্ব তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। এটা সত্যিই মহানুভবতা। দেবেন্দ্র ফড়নবীশের মতো মানুষের পক্ষেই এটা সম্ভব। এটা বিজেপির উদারতা।

দুবারের মুখ্যমন্ত্রীকে কুর্নিশ জানানোর পাশাপাশি শিণ্ডে আরও বলেন, গত তিন বছর ধরে রাজ্যে একটা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার ক্ষমতায় ছিল। উদ্ধব ঠাকরের সরকার হিন্দুত্ব থেকে সরে গিয়েছিল। রাজ্যের মানুষ এটা মেনে নিতে পারেননি।

মহারাষ্ট্রে সফল ‘অপারেশন কমল’। রাজ্যের মহা বিকাশ আগাড়ির সরকারের পতন হয়েছে। পরিস্থিতির চাপে পড়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। এই পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিতভাবেই শিবসেনার বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। সরকার গড়ার আবেদন জানাতে রাজভবনে গিয়েছেন শিণ্ডে ও ফড়ণবিস। মনে করা হচ্ছিল, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হবেন দেবেন্দ্র ফড়ণবিস। উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন একনাথ শিণ্ডে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে চমক। ফড়ণবিসের ঘোষণা, মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন শিণ্ডে। জানা যাচ্ছে, নয়া মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন বিজেপির ২৫ ও শিণ্ডের অনুগামী ১৩ জন।

মহারাষ্ট্রের মহানাটকের সমাপ্তি যে বৃহস্পতিবারই হতে চলেছে তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল বুধবারই। সুপ্রিমকোর্ট আস্থাভোটের নির্দেশ দেওয়ার পরে উদ্ধব ঠাকরের কাছে ইস্তফা দেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। সংখ্যাতত্ত্ব মহা বিকাশ আগাড়ির পক্ষে ছিল না। এই অবস্থায় বুধবার রাতে উদ্ধব ঠাকরের ইস্তফার পর থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় নাটকের শেষে এবার মহারাষ্ট্রের মসনদে ফিরতে চলেছেন দেবেন্দ্র ফড়ণবিস। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দেখা গেল শিণ্ডেকে দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি একনাথ শিণ্ডে ‘বিদ্রোহী’ হওয়ার পর থেকেই ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখেছিলেন উদ্ধবরা। তাঁর অনুগামীদের নিয়ে গুয়াহাটির হোটেলে ওঠেন শিণ্ডে। তারপর থেকেই শুরু হয় নানা জল্পনা। শেষ পর্যন্ত পরিষ্কার হয়ে যেতে থাকে, শিণ্ডেই এখন মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আসল ‘বাজিগর’। তাঁর অনুগামীরা উদ্ধবের হাত ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে ভিড়লে আর কোনও আশাই অবশিষ্ট থাকবে না উদ্ধব অ্যান্ড কোংয়ের। ক্রমে সেদিকেই পরিস্থিতি গড়ায়। অবশেষে বুধবার রাতে সরে দাঁড়ানোর তথা হাল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রবীণ শিবসেনা নেতা।

‘১৯-এর শেষদিকে হওয়া নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচনে লড়েছিল শিবসেনা। সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করেছিল গেরুয়া বাহিনী। তবে সরকারের রাশ কীভাবে রাখা হবে, সেই সমীকরণ নিয়ে জট না খোলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জেতা শিব সেনা জোট বাঁধে এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে। তখন থেকেই সুযোগ খুঁজছিল পদ্ম শিবির। অবশেষে বকলমে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন বিজেপির।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version