দুর্গা পুজোর ষষ্ঠীর দিন ৯ অক্টোবর, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কাণ্ডের দুই মাস পূর্তির দিন। এই আবহে সেদিন দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের অনশন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে চিকিৎসকদের সর্বভাভারতীয় সংগঠন। অর্থাৎ ষষ্ঠীতে গোটা দেশে প্রতিবাদের ঝাঁঝ আছড়ে পড়তে চলেছে। আগামিকাল গোটা দেশে চলবে অনশন। জুনিয়র ডাক্তাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে ফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। এদিকে ধর্মতলার ধরনা মঞ্চে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন চলছে। ৭ জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন সেখানে। তাঁদের সমর্থনে ৬ অক্টোবর কয়েকজন সিনিয়র ডাক্তারও ২৪ ঘণ্টার অনশন পালন করেন। তবে এবার রাজ্য জুড়ে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা করা হয় ধর্মতলার ধরনা মঞ্চ থেকে। এই আবহে আজ রাজ্য জুড়ে সব জুনিয়র ডাক্তাররা ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশন ধর্মঘট পালন করছেন। অন্যদিকে গতকালই জুনিয়র ডাক্তাররা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা পঞ্চমীতে মহামিছিল করবেন। তাতে সাধারণ মানুষকে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই মিছিলের অনুমতি চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। তবে কলকাতা পুলিশ পুজোর আবহে জানযটের আশঙ্কার কথা বলে সেই মিছিলের অনুমতি দিল না। শুধু তাই নয় ধর্মতলায় ধরনাস্থলে যে ডাক্তারদের বসার অনুমতি নেই, সেই কথাও মনে করিয়ে দেয়। এই আবহে পুলিশ বিকল্প রুটে মিছিল করতে বলছেন। জুনিয়ার ডাক্তারেরা কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলার অনশন মঞ্চ পর্যন্ত মিছিল করবেন বলে ঠিক করেছিলেন, পুলিশের প্রস্তাব, মিছিল হোক কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ভিক্টোরিয়া হাউস পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, সোমবার ধর্মতলার ধরনা মঞ্চ থেকে মহামিছিলের ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে অনশনকারীদের উদ্দেশে বার্তা দেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। চিকিৎসকদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন তিনি। চিনকিৎসকদের ১০ দফা দাবির অন্যতম ছিল কেন্দ্রীয় ভাবে রোগী রেফারেল সিস্টেম চালু করা। সেই বিষয়ে মনোজ পন্থ জানান, ১ নভেম্বর থেকে পুরো রাজ্যে ওই সিস্টেম চালু হবে। তিনি বলেন, আগামী ১৫ তারিখ থেকে রেফারেল ব্যবস্থার একটি পাইলট প্রোজেক্ট চলু হচ্ছে। আর ১ নভেম্বরের থেকে তা গোটা রাজ্যে কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। নবান্নে সাংবাদির বৈঠকে মনোজ পন্থ বলেন, “আমরা সবাইকে কাজে ফিরে আসতে অনুরোধ করছি। অনেকে ফিরেছেন। বাকিরাও ফিরুন। মানুষকে পরিষেবা দিন। আমরা সবাই মিলে হাসপাতালের পরিবেশের উন্নতির চেষ্টা করছি। এবং কাজ যে হচ্ছে, সেটাও দেখা যাচ্ছে”। এদিকে আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য ধর্মতলা চত্বরে ধর্নায় বসার আগে থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বায়ো টয়লেট বসানো নিয়ে অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। তারপর চৌকি, প্ল্যাস্টিকের চেয়ার নিয়েও শুরু হয় অভিযোগ। ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন, অনশনমঞ্চের জন্য কয়েকটি চৌকি আনিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ চৌকিবোঝাই সাইকেল ভ্যান আটকে দেয়। মঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছয়নি চৌকি। এছাড়া কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার আনানো হয়েছিল। সেগুলিও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল বলে অভিযোগ।

জুনিয়ার ডাক্তারদের অভিযোগ নিয়ে পুলিশ জানায় যে রাস্তা দিয়ে চৌকি আনা হচ্ছিল, সেখানে রিকশা চালানোর অনুমতি নেই। ওই নিয়ে দু’পক্ষের কথা কাটাকাটির পর সোজা থানায় গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা স্পষ্ট বলছেন, পুলিশ এই আন্দোলনে নানা ভাবে বাধা দিচ্ছে। বায়ো টয়লেট বসানো থেকে ডেকরেটরদের গাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া, সবেতেই গায়ের জোরে দেখাচ্ছে পুলিশ। তাঁরা জানান, নিজেরাই তাঁরা বায়ো টয়লেট তৈরি করেছেন। এরপর চৌকি আনতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এর থেকে খারাপ জিনিস বোধ হয় কোনও দেশের বা অন্য কোনও রাজ্যের সরকার কোনও দিন করেনি! বাংলার পুলিশ সেই রাস্তাটাও দেখিয়ে দিল। এই আবহে কলকাতা পুলিশের নতুন কমিশনার মনোজ তাঁর বাহিনিকে সতর্ক করে নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানালেন, বাকি ঘটনার সঙ্গে এই আন্দোলনকে মিলিয়ে দিলে চলবে না। জানানো হয়েছে, চিকিৎসকদের আন্দোলনের বিষয়টি সাধারণ আইন-শৃঙ্খলার বিষয় নয়। গোটা বিষয়টির প্রকৃতি বুঝে সেই মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ধৈর্য নিয়ে ঠান্ডা মাথায় এই বিষয়ে পদক্ষেপ করতে হবে। পুলিশের খারাপ ভাবমূর্তি তুলে ধরার সুযোগ চিকিৎসক বা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া চলবে না। পাশাপাশি, চিকিৎসকদের একেবারে ‘ছাড়’ দেওয়ারও পাত্র নন মনোজ। নির্দেশিকায় জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের বেআইনি কাজকর্মের নথি-প্রমাণ রাখতে হবে। তাঁদের এই কাজে শামিল অন্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও নথি-প্রমাণ রাখতে হবে। কাগজ, ছবি, ভিডিয়ো আকারেই প্রমাণ রাখতে হবে। 

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version