ধর্মতলার মহাসমাবেশ থেকে শুক্রবার রাতেই তাঁরা কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। নিজেদের কর্মবিরতি আন্দোলন তুলে নিলেও জুনিয়র ডাক্তাররা ধর্মতলায় লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি নেন।ধর্মতলা থেকেই ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট জানায়, কোনোও চাপে নয়, সাধারণ মানুষের কষ্ট, আবেগকে মর্যাদা দিয়েই জিবি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আন্দোলন আরও তীব্র হবে। তাঁরা এও বলেন, “কেউ বলতে পারেন কর্মবিরতি ভয় পেয়ে তুলছি। তা নয়। জনগণ আমাদের পাশে রয়েছেন। আমরা আন্দোলন তীব্রতর করছি। ধর্মতলায় লাগাতার যে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছি। সেখানেও আমরা বসে থাকব, কাজেও ফিরব। কাজও করব, ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তাতেও আছি। আমরা এবার জীবন বাজি রাখব”।

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য রাজ্য সরকারকে তাঁরা বার্তা দিতে চান, তাঁরা যেমন কাজে ফিরছেন, তেমন রাস্তায় থেকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা আন্দোলনে রয়েছেন। আন্দোলনকারীরা ধর্নামঞ্চে তাঁরা একটি বড় ঘড়ি টাঙিয়ে দেন। সেই ঘড়িকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারকে সময় বেঁধে দিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকার তাঁদের দাবি না মানে তবে আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা। এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘণ্টা জুনিয়র ডাক্তারদের জেনারেল বডির বৈঠকেই ঠিক হয়ে যায় পরবর্তী কর্মসূচির রূপরেখা। তার পরে সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয় রাতে। জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার বলেছে নিরাপত্তা, সুরক্ষার কাজ নাকি ২৬ শতাংশ হয়েছে। ১-২ টি জায়গা বাদ দিলে সামগ্রিকভাবে ৬ শতাংশও কাজ হয়নি। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আমাদের ধরনা শুরু হতেই রাতারাতি ৩০টি সিসিটিভি বসে গেল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও কাজ এগোয়নি রাজ্য সরকার। জুনিয়র চিকিৎসকরা বেডের স্বচ্ছতা-সহ যে ব্যবস্থা রাখতে বলেছিল তাতে সাধারণ মানুষকে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে না। সব জায়গায় ঘুরে যখন রোগীর মৃত্যু হয় তখন তাঁদের স্বাভাবিক ক্ষোভের সামনে পড়েন। সরকার দুই পক্ষকে মুখোমুখি লড়িয়ে দিতে চায়। জুনিয়র চিকিৎসকরা সেন্ট্রাল ডিরেক্টিভ চান, যাতে গণতান্ত্রিক পরিসর উন্মুক্ত হয়।

Kolkata, Sept 17 (ANI): Junior doctors, who are protesting over the RG Kar rape and murder case, celebrate after West Bengal Chief Minister Mamata Banerjee agrees to doctors’ demands including the removal of Kolkata Police Commissioner Vineet Kumar Goyal and removal of health department officials, in Kolkata on Monday. (ANI Photo)

প্রসঙ্গত দিন কয়েক আগেই সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক হেনস্থার অভিযোগ ওঠার পর দশ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে সামিল হন জুনিয়র চিকিৎসকরা। জুনিয়র চিকিৎসকরা বলেন, তাঁদের দশ দফা দাবি আসলে দুটো দাবি। প্রথম দাবি, ন্যায়বিচার। বাকি সব দাবি জড়িয়ে রয়েছে, আর একটাও যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য। তাঁদের কথায়, এই লড়াই থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে। নিরাপত্তার স্বার্থে। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বলেন, কর্মবিরতি যদি তাঁদের দাবি পূরণের অন্তরায় হয়, তার কথা ভেবেই কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হল। তবে আগামীকাল রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সময়। সেই সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করবেন। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা সাফ জানিয়েছেন, অনশন‌ও আন্দোলনের শেষ নয়। দাবি না মানা পর্যন্ত রাজপথেই থাকবেন তাঁরা। তাঁদের এই দাবি যে কথার কথা নয়, তা প্রমাণ করতে একটা বড় দেওয়ালঘড়ি সঙ্গে নিয়ে এসে ধর্নাস্থেলে টাঙিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। বলেন, এই ঘড়ি থেকেই প্রতি মিনিট, ঘণ্টার হিসাব হবে। তাই এই ঘড়ি অবস্থান মঞ্চে থাকবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যদি সরকার তাঁদের দাবি না মানে, তবে তাঁরা জীবনের বাজি রেখে আমরণ অনশন শুরু করবেন।

রাতে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন আন্দোলন মঞ্চে। তাঁরাও চিকিৎসকদের সঙ্গে মঞ্চ তৈরির কাজে হাত লাগান। বলে রাখা প্রয়োজন, শনিবার সাড়ে ৮টায় চিকিৎসকদের বেঁধে দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এরপরেই আমরণ অনশনের হুমকি। যা নিঃসন্দেহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই অবস্থায় কি পদক্ষেপ নেওয়া হয় সরকারের তরফে সেদিকেই নজর সবার। অন্যদিকে চিকিৎসকদের মঞ্চ সম্পূর্ণ ঘিরে রাখা হয়েছে পুলিশের তরফে। মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল বাহিনীকে

উল্লেখ্য, গতকাল আশিস পাণ্ডে আর্থিক দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছে। আশিস থ্রেট কালচারের মাথায় ছিল। সন্দীপ ঘোষেরা সিলেক্ট করে সিন্ডিকেট চালাচ্ছিল। গণতান্ত্রিক পরিসর উন্মুক্ত করলে থ্রেট কালচার দূর হয়। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক জুনিয়ার ডাক্তার বলেন, সুপ্রিম কোর্টে সরকার বলল চিকিৎসকরা বেড না দেওয়ায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বেড দেওয়া কি চিকিৎসকদের কাজ? সরকার চিকিৎসকদের গণশত্রু বানাতে চাইছে। সুপ্রিম কোর্টে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম চিকিৎসকদের উপর দায় ঠেলেছেন। জুনিয়ার ডাক্তারেরা প্রথম থেকে তাঁর অপসারণ চেয়ে এসেছেন। তাঁকে অপসারণ করতে হবে, এটা তাঁদের অন্যতম দাবি। জুনিয়র চিকিৎসকরা এদিন মিছিল করে ধর্মতলায় আসার পর ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। অভিযোগ, প্রেস কনফারেন্স ও অবস্থান মঞ্চ তৈরির সময় একাধিক জুনিয়র চিকিৎসককে নিগ্রহ করেন পুলিশকর্মীরা। জুনিয়র চিকিৎসকরা তার প্রতিবাদে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version