কলকাতা ব্যুরো: করোনার টিকাপ্রদান নিয়ে ১১৩ পাতার একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করলো স্বাস্থ্যমন্ত্রক। নাম ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন্স অপারেশনাল গাইডলাইন্স’ (COVID-19 vaccines operational guidelines)। ভোটগ্রহণের আদলে সরবরাহ করা হবে টিকা (Vaccine)। আর সেই প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের টিকা পেতে হলে নাম থাকতে হবে ভোটার তালিকায়। টিকা সরবরাহের যে রূপরেখা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রকাশ করেছে, তার নির্যাস অন্তত সেরকমই। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, টিকা পাওয়ার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ পঞ্চাশোর্ধ্ব এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যাঁদের ভোটার কার্ড বা তালিকায় নাম নেই। তাহলে কি তাঁরা টিকা পাবেন না? ভ্যাকসিন বণ্টন সংক্রান্ত একাধিক আলোচনা সভায় টিকা সরবরাহে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করার জন্য পুর-পঞ্চায়েত এলাকায় সমীক্ষা করানোর কথা বলে আসছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই টিকা সরবরাহ প্রক্রিয়া যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সে জন্য কো-উইন বা Co-Win (কোভিড ভ্যাকসিন ইন্টেলিজেন্স নেট‌ওয়ার্ক) নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে-

চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, অতিমারিতে প্রথম সারিতে থেকে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট শিবির করা হবে। প্রতি শিবিরে ১০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে।

পঞ্চাশোর্ধ্বদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল ক্যাম্প করা হবে। অর্থাৎ বাড়িতে গিয়েও টিকা দেওয়া হতে পারে তাঁদের। ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের কারা টিকা পাবেন, তা ঠিক হবে ভোটার তালিকা অনুযায়ী।

টিকার জোগানের নিরিখে পঞ্চাশোর্ধ্বদের আবার দু’টি ভাগে ভাগ করা হতে পারে। একটি ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সি। অপরটি ষাটোর্ধ্ব।

টিকাপ্রাপকদের আগাম তালিকা তৈরি করা হবে। নাম নথিভুক্ত থাকলে তবেই টিকা পাবেন। তাৎক্ষণিক কারও নাম নেওয়া হবে না।

রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলই ভ্যাকসিন প্রদানের দিন ধার্য করবে।
*ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, সরবরাহ, টিকা প্রদান কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া-গোটা প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে করতে পর্যাপ্ত পুলিস রাখতে হবে।

টিকা নিতে গিয়ে কেউ যদি কোনও সমস্যায় পড়েন, অসুস্থ হন তা কো-উইন সফটওয়্যার ব্যবহার করে জানাতে হবে।

Co-Win যৌথভাবে পর্যবেক্ষণ করবে কেন্দ্র ও রাজ্য।

টিকা সরবরাহ-বণ্টন প্রক্রিয়ার উপরে কেন্দ্র ও রাজ্যের নজরদারির মঞ্চ‌ও কো-উইন।

পাশাপাশি এই টিকাপ্রদান প্রক্রিয়ায় যে সমস্ত আধিকারিকরা সরাসরি অংশ নেবেন তাঁদের পাঁচটি দলে ভাগ করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ভোটগ্রহণ পর্বে আধিকারিকদের যেমন ভূমিকা ভাগ করা থাকে, এ ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনই। প্রথমেই রাখা হয়েছে ভ্যাকসিনেটর অফিসারদের। এই বিভাগে থাকছেন চিকিৎসক (এমবিবিএস, বিডিএস), স্টাফ নার্স, ফার্মাসিস্ট, এএনএম এবং এলএইভি। ইনজেকশন দেওয়ার যার বৈধতা আছে এমন কেউই এই টিকা দিতে পারবেন।

এরপরই রয়েছেন ভ্যাকসিনেশন অফিসার ওয়ান। হোমগার্ড, সিভিল ডিফেন্স, পুলিস, এনসিসি, এনএসএস, এনওয়াইকে কর্মীরা এই পর্যায়ে থাকবেন। টিকা দানের শিবিরে ঢোকার মুখেই টিকা প্রাপকদের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখবেন তাঁরা। পরবর্তী ধাপে থাকবেন ভ্যাকসিনেশন অফিসার টু। টিকা নেবে যারা তাদের নথি পরীক্ষা করবেন। প্রশাসনিক আধিকারিকরা এখানে থাকতে পারেন। ভ্যাকসিনেশন অফিসার থ্রি, ফোর হিসাবে দু’জন সহায়ক থাকবেন যাঁরা ভিড় নিয়ন্ত্রণ করবেন। যিনি টিকা নেবেন তাঁর কোনও প্রশ্ন থাকলে তার উত্তর দেবেন।

এ বিষয়ে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা চিকিৎসক সুভাষ সরকার বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার যে পদ্ধতির কথা ভেবেছে, সেটা একেবারেই সঠিক পদ্ধতি। যে কোনও রাষ্ট্র তো নিজের নাগরিকদেরই আগে ভ্যাকসিন দেবে, এটাই তো স্বাভাবিক। সব দেশই তাই করছে। আর নাগরিকের নাম অবশ্যই ভোটার তালিকায় থাকা উচিত।”

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version