মৈনাক শর্মা
সরকারের সাথে সাধারণ নাগরিকদের যোগ সূত্রের দায়িত্ব হিসাবে সংবাদ মাধ্যম জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব ইতিহাসে। কেবল যোগসূত্র বলা ঠিক নয়, সংবাদ মাধ্যম বিশ্বের দেশ গুলির আন্দোলনে জনমত তৈরিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে। যার ধারা ভারতের জনগণের মধ্যে প্রথম স্বাধীনতার চেতনার সঞ্চার করে। এই বিশেষ ক্ষমতার জন্যই সংবাদ মাধ্যম হয়ে ওঠে গণতন্ত্রের চতুর্থ প্রতীক। আবার জনমতকে জাতীয় সংসদে তুলে ধরতে আবার আমজনতার কাছে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও বার্তার সুফল ও কুফলের বিশ্লেষণের মাধ্যম হিসাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নিজের মতামত ও এক দেশ অন্য দেশের বার্তা পোঁছানোর মাধমও হয়ে উঠছে সংবাদ মাধমে।কিন্তু ইতিহাসের সময় থেকে জনতার আস্থা পেয়ে আশা সংবাদ মাধ্যম বর্তমান দিনে অধিক সরকারি হস্তক্ষেপে, নিরপেক্ষতার অভাবে বিশ্বাস হারাচ্ছে জনমনে। আর ঠিক এই কারণেই ব্রিটেনে নিষেধাজ্ঞা জারির মুখে চীনা সংবাদ মাধ্যম, চাইনা গ্লোবাল টেলিভশন নেটওয়ার্ক ( CGTN )।

করোনা ভাইরাসের জনক চিন, বিশ্বের দেশগুলির থেকে নিজের নামের এই তকমা সরাতে কখনো ভারত আবার কখনো অন্য দেশ গুলির উপর দায় চাপানোর কৌশলে বেজিং বার বার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংবাদ মাধ্যমে দুনিয়াতে কোরোনার ভুয়ো তত্ত্ব প্রচার করে চলেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই চীন কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রিত CGTN র প্রসারণ বন্ধের নির্দেশ দেয় ব্রিটিশ সরকার। তবে ঠিক জি-৭ সম্মেনলের আগে চীন বিরোধী পদক্ষেপ বিশ্বের কাছে অন্য বার্তা পৌঁছানোর লক্ষে ইংল্যান্ড। কারণ এরআগেও ৫-জি প্রযুক্তিতে চিন কোম্পানি huawei কে বাদ দিয়ে করা বার্তা দেয় বেজিংকে।
তাছাড়া চিন বিনিয়োগের ভয়াবহ প্রভাবকে মাথায় রেখে নিজের দেশে বিনিয়োগের নাম বেজিংয়ের প্রভাব রুখতে নতুন সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বিল পাশের পথে রয়েছে বরিস জনসন সরকার। লন্ডনে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় ব্রিটেনের ৬০ শতাংশ মানুষ চিন বিদ্বেষী, তাছাড়া জি ৭ সম্মেলনে চীনের বিরুদ্ধে ডি ১০ (ডেমোক্রেটিক ১০) দল গঠনের প্রস্তাব ও রাখতে পারে ব্রিটেন। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের সঠিক তথ্য না জানিয়ে তা গোপন করায় ব্রিটেন ছাড়া চিনের উপর ক্ষোভ রয়েছে জার্মানি, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার ও সৌদি আরবের মতো দেশ গুলির সে ক্ষেত্রে বর্তমানে CGTN চ্যানেলের সম্প্রসারণ ব্রিটেনে বন্ধ হলেও, ভবিষ্যতে CGTN স্প্যানিশ, আরবিক এর প্রসারণও বন্ধ হতে পারে।

ফরাসি বিপ্লবের মতনই স্বাধীন ভারতের চেতনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বার মূল অস্ত্র ছিল সংবাদ মাধ্যম। তাই নিজের নিরপেক্ষতার জন্য ১৮৮২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনের প্রকোপের মুখেও পড়তে হয় ভারতের গণমাধম গুলিকে। আবার সমাজের সাথে সাথে আধুনিকতা এসেছে সংবাদ মাধমেও। ডিজিটাল যুগের শুরুর সাথেই বেড়ে চলেছে গণমাধমের দায়িত্ব। দুনিয়াতে দেশের সরকারের বার্তা প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠছে প্রিন্ট মিডিয়া ও টিভি মিডিয়া। অধিক সরকারের হস্তক্ষেপে ভেঙে পড়ছে গণতন্ত্রের চতুর্থ পিলারটি। নিরপেক্ষতার অভাবে পাঠক ও দর্শকদের আস্থা হারাচ্ছে সংবাদ মাধ্যম। সেক্ষেত্রে ব্রিটেনের হাত ধরেই ভবিষ্যতে বন্ধের মুখে পড়তে পারে অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম গুলিও।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version